জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া আইন অনুষদের ডিন এবং আইন ও বিচার বিভাগের সভাপতি তাপস কুমার দাস এবং সহযোগী অধ্যাপক সুপ্রভাত পালকে চাকরিচ্যুত করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১১ আগস্ট) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন আইন ও বিচার বিভাগের সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এর আগে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার চত্বরে যান তারা।
মানববন্ধনে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে পুলিশি গ্রেপ্তারে শিক্ষার্থীদের কোনো সহযোগিতা না করা, শিক্ষার্থীদের দুষ্কৃতকারী ও শিবির বলে ট্যাগ দেওয়া। এ ছাড়া ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন, পরিকল্পিতভাবে রেজাল্ট কমিয়ে দেওয়া ও ক্লাসে অশিক্ষকসুলভ আচরণসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে আইন ও বিচার বিভাগের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিয়াজুল রাহী বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তখন বিষয়টি তাপস স্যারকে জানানো হলে তিনি আমাকে হিজবুত তাহরীর লোক ও দুষ্কৃতকারী আখ্যা দেন। যেখানে অন্য বিভাগের শিক্ষকরা আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে নিচ্ছেন, সেখানে আমার বিভাগের স্যার এসব কথা বলেন!’
বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরশাদুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনের সময় হল বন্ধ ঘোষণা করায় আমরা অনেকেই আশপাশের এলাকায় থাকতাম। আমার বিভাগের ভাই-বন্ধুদের পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ায় ডিন হিসেবে তার কাছে সহযোগিতা চাই। তখন তিনি হল বন্ধ, ভার্সিটি বন্ধ তাহলে তোমরা ক্যাম্পাসে কী করো—এসব বলে চার্জ করতে শুরু করেন। তিনি তাদের শিবির বলেও আখ্যায়িত করেন। আরেক শিক্ষার্থী সৃজনকে গ্রেপ্তারের পর তার বাবা কল দিয়ে সহযোগিতা চাইলে তিনি সৃজনের বাবার সঙ্গেও বাজে আচরণ করেন। আমরা তার পদত্যাগ চাই!’
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় মদদদাতা শিক্ষকদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মহুয়া চত্বর এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘১৫ জুলাই আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রলীগের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার চাইতে উপাচার্যের বাসভবনে গিয়েছিলাম। সেখানে ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। এই হামলার মদদদাতা ছিলেন কিছু নামধারী শিক্ষক। এসব শিক্ষকের প্রতি নিন্দা, ঘৃণা ও লজ্জা জানাই। আপনাদের শিক্ষক হিসেবে উচিত ছিল ন্যায়নীতির পক্ষে থাকা। কিন্তু আপনারা সাবেক সরকারের চাটুকারিতা করে চাকরিতে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। অনেক শিক্ষক এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন, বাকি যারা পদত্যাগ করেননি তাদের অতিদ্রুত পদত্যাগ করতে হবে।’
অন্যদিকে একই অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ছয় শিক্ষকের চাকরিচ্যুত করে শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুর দেড়টার দিকে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ রঙ্গন, অধ্যাপক একেএম ইউসুফ হাসান, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক আশরাফুল হাবীব, ফাহিম মালিক ও মহিবুর রৌফ শৈবালের পদত্যাগ দাবি করেন।
মন্তব্য করুন