শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশব্যাপী সহিংসতা, লুটপাট ও হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্যরা। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
‘সুরক্ষা, সাম্য, ন্যায়বিচার সবার জন্য। লুটপাট সাম্প্রদায়িক হামলাসহ সব সহিংসতা রুখে দিন’ এ ব্যানারে কর্মসূচিতে সংগঠনটির বিভিন্ন সদস্য বক্তব্য রাখেন।
কর্মসূচিতে ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক সুষ্মিতা চক্রবর্তী বলেন, যে তরুণ প্রজন্ম এক রক্তাক্ত লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এই জায়গায় এসেছে। তাদের প্রতি আমরা যথেষ্ট আস্থাশীল। তাদের দেখে আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি তারা পাড়ায় পাড়ায় কমিটি গঠন করছে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম রুখে দাঁড়িয়েছে। এ প্রতিবাদ জারি থাকুক ক্যাম্পাসে। আমি বিশ্বাস করি আমার অনেক সহকর্মী একটা সুন্দর দেশের স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু দলীয় বাধার কারণে তারা এখানে আসতে পারেনি। আমি মনে করি একজন শিক্ষক হিসেবে এইটা একটা গ্লানির বিষয়। সেইটা আমাদের সোচ্চার হওয়া উচিত শিক্ষাঙ্গনগুলোতে যে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে মাঠে নামা। তাহলেই আমরা একাডেমিক ও সাংস্কৃতিকভাবে একটা সুন্দর জায়গায় পৌঁছাতে পারব।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, আগে যেটা ছিল সেগুলোর যদি পুনরাবৃত্তি হয় তাহলে কোনোকিছুই সম্ভব হবে না কারণ এই রাষ্ট্রের মাথা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় যদি পচে যায়, এরইমধ্যে পচে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে ক্লাস নেওয়া পর্যন্ত সব জায়গায় অনিয়ম। আপনারা যারা এই আন্দোলনে আছেন নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্যে তাদের অসংখ্য কাজ। কারও ঘর ভাঙা আমাদের কাজ না, এগুলোর জন্য বিচার হবে, সেই বিচারিক ব্যবস্থা করতে হবে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিক্ষার্থীদের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা দেশের প্রায় সাতানব্বই ভাগ মানুষের চাওয়া। এই ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচারী সরকার দেশের বিএনপি, জামায়াতসহ বামপন্থি সংগঠনগুলোর ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপি একটি বড় আন্দোলনের গড়তে তুলতে চেয়েছে সেই সময় তাদের সবাইকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। অথচ এখানে আওয়ামী লীগের এই ক্যাপাসিটি নেই যে কারো সহযোগিতা, সহমর্মিতা ছাড়া দাঁড়াতে পারবে। বাংলাদেশের সব ইতিহাস ছাত্র জনতার। এবারে ছাত্রদের আন্দোলন ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। ২০১৮ সালে ছিল কোটা আন্দোলন, সেই আন্দোলন পিটিয়ে শেষ করা হয়েছে। এবারের আন্দোলন সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিল। তারপরেও শিক্ষার্থীদের জামায়াত-শিবির বলে আক্রমণ করা হয়েছে। আর যিনি এসব করেছেন তিনি স্বৈরাচারের একটি চূড়ান্ত প্রতীক। এখন আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার সময়। কালকে দেশের অনেক জায়গায় হামলা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজ দায়িত্বে অনেক জায়গায় নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছে। সেনাবাহিনী এখনো আমাদের সহযোগিতা করছে না, তারা বিভিন্ন খেলার মধ্যে আছে। আমাদের মনে রাখতে হবে দেশটা আমাদের সবার। তাই সবাই মিলেই দাঁড়াতে হবে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে সোমবার (৫ আগস্ট) পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এরপরই দেশব্যাপী হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু হয়।
মন্তব্য করুন