কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধ করার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হল খুলে দেওয়ার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (৩ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের এক পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এ ঘোষণা দেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সব ক্যাম্পাস ও হল খুলে দেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। আগামীকাল রোববারের মধ্যে হল খোলা না হলে শিক্ষার্থীরা নিজ দায়িত্ব হল খুলে ভেতর প্রবেশ করবে।
এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকেলে সরকার পতনের একদফা দাবির ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
নাহিদ ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আমরা খুব দ্রুতই ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের জন্য সর্বস্তরের নাগরিক, ছাত্রসংগঠন ও সব পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে মিলে সম্মিলিত মোর্চা ঘোষণা করব। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় রূপরেখা আমরা সবার সামনে হাজির করব।
নাহিদ আরও বলেন, শুধু শেখ হাসিনা নন, মন্ত্রিসভাসহ পুরো সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ করতে হবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে চাই, যেখানে আর কখনো কোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্র-ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে।
যে স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থান শুরু হয়ে গেছে, তার সঙ্গে মানুষকে যোগ দেওয়া এবং পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান নাহিদ। তিনি কাল থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণাটিও তুলে ধরেন।
সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তাবাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, এ সরকারকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। আপনারা সরকারকে সমর্থন না দিয়ে জনগণকে সমর্থন দিন।
এর আগে দুপুর থেকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন। সময় যত গড়াতে থাকে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। হাজারো মানুষের ভিড়ে শহীদ মিনার চত্বর ও এর আশপাশের এলাকার পা ফেলার জায়গা নেই। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে একত্রিত হন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজন। হাজারো মানুষের মুহুর্মুহু স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে পুরো এলাকা।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পায়ে হাঁটার পাশাপাশি রিকশা, সিএনজিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে শহীদ মিনারে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে দেখা গেছে অভিভাবকদেরও। আছেন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষক এমনকি রিকশাচালকরাও। যেন জনমানুষের ঢল নেমেছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সমাবেশ যোগ দেওয়া জনমানুষের ভিড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রাঙ্গণ থেকে ছড়িয়ে গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জগন্নাথ হলসহ অন্য রাস্তায়ও।
শহীদ মিনার এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস,’ ‘স্বৈরাচারের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে,’ ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে,’ ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত,’ ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো,’ ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, অভ্যুত্থান’, ‘পদত্যাগ পদত্যাগ, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ এমন নানা স্লোগান দিচ্ছেন।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহত, গণগ্রেপ্তার ও হয়রানির প্রতিবাদে ব্যান্ড সংগীতশিল্পীরা আজ বিকেল ৩টায় ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে জড়ো হন। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানাতে সংগীতশিল্পীরা শহীদ মিনারে রওনা দেন। মিছিল নিয়ে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তারা শহীদ মিনার এলাকায় পৌঁছান।
মন্তব্য করুন