বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের ব্যবহৃত স্লোগান ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’-এর প্রতিবাদ স্বরূপ ‘তুমি কে, আমি কে, বাঙালি, বাঙালি’ পোস্টার ফেসবুকে শেয়ার করায় তোপের মুখে পড়েছেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. সামসুজ্জোহা। সাইবার বুলিং শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত ১৭ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে ‘তুমি কে, আমি কে, বাঙালি, বাঙালি’ পোস্টার এবং ‘ব্যক্তি, পরিবার, রাষ্ট্র ও সমাজে পরিমার্জন হতে পারে অনেক। কিন্তু স্লোগানটি বন্ধ করুন, কানে কুৎসিত লাগে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আর্তনাদ শুনতে পাই’ এমন একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি মারাত্মক সাইবার হামলা ও বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন।
জানা যায়, অধ্যাপক ড. মো. সামসুজ্জোহাকে আক্রমণ করে পবিপ্রবিসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা বিভিন্ন বিরূপ ও নেতিবাচক কমেন্টস করেন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে তিনি গত ১৮ জুলাই ফেসবুক থেকে তার পোস্টের কমেন্টস অপশন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। তাকে পা-চাটা কুত্তা দালাল, ঘৃণ্য চেতনাবাজ ইত্যাদি নামে অভিহিত করাসহ, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষ সমর্থন করায় তার সংস্কার প্রয়োজন মর্মে পবিপ্রবির ছাত্রছাত্রীদের ফেসবুক গ্রুপ পবিপ্রবিয়ান-এ পোস্টও দেওয়া হয়। ফলে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সাইটের প্রতিষ্ঠাতা এডিটর ছিলাম, আমার বাবাকে ২০০৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করে। পবিপ্রবিতে বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে অর্পিত দায়িত্ব পালনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সরকার ও প্রধানমন্ত্রী বিরোধী চক্র হিংসার বশবর্তী হয়ে চলমান কোটা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সাইবার হামলা চালিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে বড় আপা সম্বোধন করায় বেশ কয়েকবার আমার ইমেইল ও ফেসবুক আইডি হ্যাক করার চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তকারীরা।
তিনি আরও বলেন, সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ায় আমি ফেসবুক পেজে করা অশ্রাব্য কমেন্টগুলো হাইড রেখেছি। কমেন্টসে দেখা যায় ইশতিয়াক আহমেদ অয়ন, মো. শাহ পরান, সৌরভ জিতু, রবিউল হাসান রবি, শান্তা ইসলাম, মো. মোজাহিদুল ইসলাম, মো. কামাল হোসেন, সাদ বিন ইসলাম, প্রিতম রায়, সাবিকুন্নাহার ফাল্গুনী, মারিয়া আনজুম, শাহরিয়ার জাহান কনক, মো. শহিদুল ইসলাম, মহসিন খান, ফজলে রাব্বী খান, কাজী আরিফ, মুসফিকুর রহমান, রাশেদুল ইসলাম, মিথুন আব্দুল্লাহ, ওমর ফারুক অভি, এম এ আলমসহ বেশকিছু শিক্ষার্থী আমাকে ও প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করেন। এ ছাড়া শিক্ষক খান মতিউর রহমান, মনিরুল ইসলাম, মো. ফরহাদ খান ও পবিপ্রবির শিক্ষক মাসুদ রানা প্রমুখ এতে অংশ নেন।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. আসাদুজ্জামান মিয়া (মুন্না) বলেন, ‘এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের রাজাকার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা 'তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার' বলে স্লোগান দিয়েছে। আসলে মুখে বললেই কেউ রাজাকার হয়ে যায় না। এটা নিয়ে যথেষ্ট ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এই স্লোগানকে দায়িত্বশীলদের সিরিয়াসলি গ্রহণ করা ও তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত।’
এ বিষয়ে পবিপ্রবির প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, ‘সাইবার হামলার একটা ঘৃণিত ও নিন্দিত কাজ। লিখত অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন