শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুদ্র সেন। সম্প্রতি কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় নিহত হয়েছেন তিনি। শোকে স্তব্ধ রুদ্রের একমাত্র বোন সুস্মিতা সেন ভাইয়ের অকাল মৃ্ত্যুর কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমার ভাই আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। আমরা দুনিয়ায় বিচার চাইব না। কার কাছে যাব, সৃষ্টিকর্তার কাছে ছেড়ে দিলাম।’
সুস্মিতা সেন আরও বলেন, ‘আমার একমাত্র ভাই রুদ্র সেন। কোটা আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশ নেয় সে। আমাদের পরিবারে কেউ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। যেহেতু কোটা আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, তাই আন্দোলনে অংশ নেয় সে। কখনো কোনো গন্ডগোলের মধ্যে জড়ায়নি।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৮ জুলাই দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের ধাওয়ায় পড়ে যায় রুদ্র। ওই সময় হাঁটুতে আঘাত পায়। পরে আহত অবস্থায় সে তার ভাড়া বাসায় চলে যায় । সন্ধ্যার দিকে পুলিশের সঙ্গে তৃতীয় দফায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে দ্রুত চার বন্ধু মিলে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য কলার গাছের তৈরি ভেলায় করে সুরমা আবাসিক এলাকায় খাল পার হচ্ছিল। খালের মাঝামাঝি গিয়ে ভেলাটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে তারা চার বন্ধু খালের গভীর পানিতে পড়ে যায়। আমার ভাই সাঁতার জানত না। তা ছাড়া তার পায়ের আঘাতের কারণে খালের পানিতে ডুবে যায়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
কোটা আন্দোলনকারী বা ক্ষমতাসীন দলের কেউ আমাদের কোনো খোঁজখবর নিতে আসেনি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৯ জুলাই কারফিউর মধ্যে রাত সাড়ে ১২টায় মরদেহ দিনাজপুরের পাহাড়পুরে আমাদের বাসায় এসে পৌঁছায়। প্রশাসনের সহযোগিতায় রাতেই ফুলতলা শ্মশানে সৎকার করা হয়।’
রুদ্রের বাবা সুবীর সেন দিনাজপুর সদর উপজেলার পাঁচবাড়ী মোকলেছুর রহমান মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক ছিলেন। ছেলের মরদেহ আসার বর্ণনা দিতে দিতেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন বাবা-মা। মা শিখা বণিক ছেলের মৃত্যুসংবাদে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। তার সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি।
মন্তব্য করুন