সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম বাতিল চেয়ে গত পহেলা জুলাই থেকে কর্মবিরতি ছিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি)। ফলে গত প্রায় এক মাস থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এতে ভয়াবহ সেশনজটের আশঙ্কায় রয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী। তাই দেশের পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরতে চান।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১০টি আবাসিক হলের ১৫৮টি কক্ষে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৪ কোটি টাকা। তাই ক্ষতিগ্রস্ত কক্ষগুলো সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সম্ভাবনা নেই।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, দেশে সরকারি চাকরিতে কোটা রাখা হয়েছিল ৫৬ শতাংশ। এই ইস্যুতে আন্দোলন হবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা একটি যৌক্তিক দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। আমাদের অহিংস আন্দোলনে হামলা চালিয়ে শত শত মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। পরে আমাদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আদালতের রায়ে কোটা সংস্কার করা হয়েছে। দেশের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তাই এখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যেতে চাই। তবে এই আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে একটি বিশেষ মহল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে, যা কখনো কাম্য নয়।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই বিকেল ৩টায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে গেলে হলগেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় শাখা ছাত্রলীগ। তালা ভেঙে বিক্ষোভ মিছিল বের করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা৷ তবে এই সুযোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা। এরপর তারা হলে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এরপর দফায় দফায় হামলা চালানো হয় ৯টি আবাসিক হলে৷ ভাঙচুর করা হয় মোট ১৫৮টি কক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, এতে মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকার।
এ ঘটনা তদন্তে গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এসএম এক্রাম উল্যাহকে আহ্বায়ক করে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হোসেন বকুলকে।
তদন্ত কমিটিকে ঘটনার বিবরণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং কী করণীয় (সুপারিশ) সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ জন্য কমিটিকে আট সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে এ হলগুলোর সংস্কারকাজ শুরু হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আশিকুর রহমান বলেন, বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে কোটা সংস্কার ছিল অসহিংস আন্দোলন। কিন্তু আমাদের ওপর হামলা করে, আমাদের অহিংস আন্দোলনকে সহিংস করে তোলা হয়েছে। শত শত মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে। এখন আমাদেরকে নিজেদের ক্যাম্পাসে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা দ্রুত ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই।
পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রানা রায় বলেন, আমাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দিতেই হলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া উচিত। আমরা ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই। করোনার কারণে আমরা এমনিতেই পিছিয়ে আছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক কালবেলাকে বলেন, ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে প্রশাসন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি ভালো আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ-বিজিবির টহল অব্যাহত রয়েছে।
উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি হলের বেশকিছু কক্ষ সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। বর্তমানে কক্ষগুলো ছাত্রদের বসবাসের অনুপযোগী। এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে এ হলগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হবে। সংস্কার কাজ শেষ হলেই ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টা আগে নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়াও হলগুলোকে বসবাসের উপযোগী করতে হবে। বেশকিছু হল এমন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে কেউ দেখলে তার মনে আঘাত লাগবে। তাই আমরা চাই না যে, শিক্ষার্থীরা এসে এসব দেখুক। তাই এগুলো সংস্কারের পরই ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।’
মন্তব্য করুন