সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) হলে থাকতে বিশেষ পরিচয় থাকতে হবে। শিক্ষার্থী পরিচয় ছাড়াও ছাত্রলীগ, তালামীয, তাবলীগ, ছাত্র মজলিস, সাংবাদিক বা ছাত্রদল পরিচয় না থাকলে হলে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
শাবিতে ছয়টি হল রয়েছে। যার মধ্যে তিনটি ছাত্র হল এবং তিনটি ছাত্রী হল। ছাত্রী হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে উঠতে পারলেও ছাত্র হলে উঠতে চাইলে বড় ভাই ও গ্রুপ লিডারদের মাধ্যমে উঠতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলে প্রায় ১৫০০-এর অধিক সিট রয়েছে। এসব সিট ছাত্রলীগ, তালামীয, তাবলীগ, ছাত্র মজলিস, সাংবাদিক এবং ছাত্রদলের দখলে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম বর্ষে ভর্তির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্রে হল সংযুক্ত করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু হলে উঠতে গেলে মিছিল-মিটিংসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হবে মর্মে হলে সিটের দখল এসব ছাত্রসংঠন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্বিতীয় বর্ষের এক আবাসিক হলের শিক্ষার্থী বলেন, আমার বন্ধুরা হলে ওঠার কিছুদিন পর আমি তাদের হলে ওঠার আগ্রহ প্রকাশ করি। পরে তারা হলের ইমিডিয়েট সিনিয়র ভাইদের সঙ্গে কথা বলে আমাকে হলে তোলে। পরে প্রতিদিন মিছিল-মিটিং ও গ্রুপের বিভিন্ন কাজে দৌড়াদৌড়ি করা লাগে। যদি নিয়মিত প্রোগ্রামাদিতে উপস্থিত না থাকতে পারি, তখন হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি ফাইনাল পরীক্ষার আগের দিনও প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা লাগে, না হয় গ্রুপ লিডাররা বলে, পড়াশোনার জন্য হল না, পড়াশোনা করতে চাইলে মেসে যা। হলে থাকলে এসব করতে হবে। পরে আমার পড়াশোনা ও অন্যান্য কাজে ব্যাঘাত ঘটায় আমি হল থেকে মেসে চলে আসি।
শাহপরান আবাসিক হলের শিক্ষার্থী মুবাশ্বির বলেন, আমরা মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হলের বৈধ সিট চাই। কোনো রাজনৈতিক নেতার মাধ্যমে হলে উঠতে চাই না। হল হবে রাজনীতিমুক্ত এবং পড়াশোনার সুন্দর পরিবেশ থাকবে। কিন্তু আমাদের হলে থাকতে হলে নিয়মিত মিছিল-মিটিং ও প্রোগ্রামে অংশ নিতে হয়।
এদিকে গত (১৭ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হল থেকে দেড় শতাধিক মদের বোতল, ১টি শটগান, ১টি রিভলবার, ৩টি চেইন, ১শ স্টিলের পাইপ, ১০টি রামদা, ১২টি চাকু, ৩টি হাতুড়ি ও কিছু গাঁজা উদ্ধার করা হয়। পরে তা হল প্রভোস্টের কাছে হস্তান্তর করে শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে শাহ পরান হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক কৌশিক সাহার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও কলটি রিসিভ হয়নি।
তবে শাহপরান হল থেকে অস্ত্র ও মাদক দ্রব্য উদ্ধার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন বলেন, আমরা সব অস্ত্র পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ বিষয় নিয়ে প্রশাসন আলাপ-আলোচনা করবে। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে এবং পরবর্তীতে হলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন