রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধের ৯ ঘণ্টা পর র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সহযোগিতায় উদ্ধার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু।
বুধবার (১৭ জুলাই) রাত ৮টার দিকে উপাচার্যসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এর আগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ৫ দফা দাবিতে প্রশাসন ভবন ঘেরাও করে রাখা আন্দোলনকারীদের হটাতে ক্যাম্পাসে বিপুল পরিমাণ র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা অবস্থান নেয়। এর একটু পরেই আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় তারা পিছু হটে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন।
জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, দুপুরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নোটিশ প্রত্যাহার, আবাসিক হল খোলা রাখাসহ পাঁচ দফা দাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বেলা ১১টার দিকে প্রশাসন ভবন ঘেরাও করে।
এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। তখন থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু, উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান উল ইসলাম টিপু ও অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবির, রেজিস্টার অধ্যাপক ড. তারিকুল হাসানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা আটকা পড়েন।
প্রশাসন ভবন অবরুদ্ধ করেই আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। কিন্তু আন্দোলনকারীদের দাবি না মানায় তারা তাদের কর্মসূচিতে অটল থাকে। একপর্যায়ে বিকেল ৩টার দিকে প্রশাসন ভবনের বিদ্যুৎ ও পানির লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় আন্দোলনকারীরা।
প্রায় ৪ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ ও পানিবিহীন অবস্থায় প্রশাসন ভবনে অবরুদ্ধ থাকেন। এরপর অবরুদ্ধ অবস্থায় ভিসি স্থানীয় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সহযোগিতা চান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অনুমতি সাপেক্ষে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা আন্দোলনকারীদের প্রশাসন ভবনের সামন থেকে হটাতে প্রস্তুতি নেন। পরে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমরা অনেক ধৈর্য্য ধরে তাদের সঙ্গে তিনবার বসেছি। তাদের কথা শুনেছি। তারা আমাদের কথা শুরুতে শুনেছিল। কিছুক্ষণ পর তারা আমাদের জানাল, বিষয়টি আর আমাদের হাতে নেই, বহিরাগতরা প্রবেশ করেছে। বহিরাগতরা এসেই বিকেল ৩টার দিকে প্রশাসন ভবনের বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
তিনি বলেন, যখন দেখলাম, আমার শিক্ষার্থীরা এখানে নেই বহিরাগত কিছু ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান করছে, তখন আমি স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলাম। সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় প্রশাসন আমাকে এ অবস্থা থেকে উদ্ধার করে। বর্তমানে ক্যাম্পাস আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের নির্দেশনা দেওয়ার পর আমরা ক্যাম্পাসে এসে অভিযান পরিচালনা করেছি। এখানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অভিযান চালিয়েছি। এরপরও যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের কাছে কোনো সাহায্য চায় তাহলে আমরা সদাপ্রস্তুত।
মন্তব্য করুন