ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৪১ এএম
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ঢাবির ৬ হলকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা

রোকেয়া হল। ছবি : সংগৃহীত
রোকেয়া হল। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ সার্জেন্ট মুহাম্মদ জহুরুল হকসহ নারীদের ৫ হলকে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাতে কোটাবিরোধী আন্দোলনে সমর্থনকারী শিক্ষার্থীদের একাট্টা দাবির মুখে এসব হলের প্রাধ্যক্ষরা ছাত্র রাজনীতিমুক্ত করে শিক্ষার্থীদের অঙ্গীকারনামা বা লিখিত দিতে বাধ্য হন।

ঘোষিত রাজনীতিমুক্ত হলগুলো হলো- রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হল, কবি সুফিয়া কামাল হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রাতে সর্বপ্রথম রোকেয়া হলকে সব ধরনের রাজনীতিমুক্ত হল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এছাড়া, এই হল থেকে ১০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে কোটাবিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থী কর্তৃক পিটিয়ে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

সূত্র জানায়, রাত ১১টার দিকে এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। ১০টায় প্রবেশের শেষ সময় থাকলেও ছাত্রলীগের নেত্রীরা নির্ধারিত সময়ের পরে হলে প্রবেশ করতে চাইলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে, শিক্ষার্থীরা মারমুখী হয়ে গেলে হাউস টিউটররা তাদের প্রটোকল দিয়ে কক্ষে পৌঁছে দেন। পরে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের মারধর করে কক্ষ থেকে বের করে দেন।

বের করে দেওয়া ১০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মধ্যে হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইন, বর্ণালী ঘোষ বর্ণ, সামিহা মাহবুব, সাজিয়া রহমান, বিপর্ণা রায় ও সাইফুন্নেসা ইলমিসহ অন্যরা ছিলেন।

নেত্রীদের হল থেকে বের করে দিয়ে প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে একটি লিখিত নেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে বলা হয়, আমরা রোকেয়া হলের মেয়েরা এই মর্মে লিখিত নিচ্ছি যে, আজ থেকে রোকেয়া হলের অভ্যন্তরে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, যুবদল, জাসদ, শিবির ইত্যাদি) নিষিদ্ধ করা হলো। কোনো ধরনের পলিটিক্যাল রুম বা গণরুম থাকবে না। কোনো পলিটিক্যাল প্রোগ্রাম হলে হবে না। কোনো ধরনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা হলের সঙ্গে থাকবে না। আমরা হলের মেয়েরা যদি ওইসব দলের দ্বারা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই, তাহলে হল প্রশাসন ও হল প্রভোস্টকে এর দায় নিতে হবে। আজ থেকে রোকেয়া হলকে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করা হলো।

এরপর সুফিয়া কামাল হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, শামসুন নাহার হল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল ও জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ নিজ নিজ হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে অঙ্গীকারনামা দেন।

শামসুন নাহার হলের অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করা হয়, শামসুন নাহার হলে কোনো ধরনের দলীয় রাজনীতি চলবে না; যে সব ছাত্রীর হলে অবস্থানের মেয়াদ শেষ তাদের অতি দ্রুত হলছাড়া করতে হবে এবং ছাত্রীদের মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দিতে হবে; কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এবং আজকে রাতে যারা অবস্থান নিয়েছে সেই প্রত্যেকটির ছাত্রীর হলে সিট এবং শারীরিক মানসিক স্বাস্থ্যের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে; পরবর্তীতে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে কোনো ছাত্রীকে হেনস্থার শিকার করা হবে না; কোনো ধরনের পদ-পদবি বা ক্ষমতার প্রদর্শন ঘটিয়ে কোনো অন্যায্য সুযোগ-সুবিধা কোনো ছাত্রীকে দেওয়া যাবে না; প্রত্যেকটি ছাত্রীকে মেধার ভিত্তিতে অথবা উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে হলের সিট বরাদ্দ দিতে হবে এবং সমান সুযোগ প্রদান করতে হবে; শামসুন নাহার হলে ছাত্রলীগের সক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনাকারী মেয়েরা মুচলেকা দিয়ে বের হতে হবে যে, তারা কখনো হলে ফিরবে না এবং হলের বাইরে থেকে কোনো রকম রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করার চেষ্টা করবে না এবং মধ্য ভবন দ্বিতীয় তলার মেয়েদের রুম পরিবর্তন করে দিতে হবে।

রাত দেড়টায় বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নাজমুন নাহার লিখিত অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন। অঙ্গীকারনামায় বলা হয়, আমরা বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের সাধারণ শিক্ষার্থী এ মর্মে লিখিত নিচ্ছি যে, আজ ১৭-৭-২০২৪ থেকে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের ছাত্র রাজনীতি (ছত্রলীগ, ছাত্রদল, যুবদল, ছাত্রফ্রন্ট, জামায়াত-শিবির) নিষিদ্ধ করা হলো। কোনো ধরনের পলিটিক্যাল রুম বা গণরুম থাকবে না। কোনো ধরনের পলিটিক্যাল প্রোগ্রাম হবে না৷ কোনো ধরনের পলিটিক্যাল সম্পৃক্ততা হলের সঙ্গে থাকবে না। আমরা হলের মেয়েরা যদি এসব দলের দ্বারা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই, তাহলে এই দায় প্রশাসন ও হল প্রভোস্টকে নিতে হবে।

আজ থেকে বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলকে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করা হলো।

সর্বশেষ ভোর রাত ৫টার দিকে ব্যাপক উত্তেজনাকর পরিবেশের মুখে পড়ে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই হলকে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করেন।

এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীদের জন্য নিম্নোক্ত নির্দেশনা প্রদান করা হলো-

১. শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে স্থায়ীভাবে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলো। ২. কোনো বহিরাগত হলে অবস্থান করতে পারবে না।। ৩. শিক্ষার্থী কোনো প্রকার ক্ষতির (শারীরিক ও মৌখিক) সম্মুখীন হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ৪. প্রশাসনিকভাবে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সিট বণ্টনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ৫. হলের সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যুদ্ধের মোড় ঘোরাতে কতটা কাজে দেবে এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র

চাকরি দেবে আগোরা, সপ্তাহে ২ দিন ছুটি

শীতে জবুথবু কুড়িগ্রাম

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সত্ত্বেও কৃষি উৎপাদন ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে : রাষ্ট্রদূত

পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক, কী আলোচনা হলো?

‘ভুয়া সংবাদ’ ধরিয়ে দেবে যে টুল

ঈদে আসছে জুয়েলের পিনিক

বায়ু দূষণের শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার খবর কী

‘জনগ‌ণের সম্পদ খাওয়া আর জাহান্না‌মের আগুন খাওয়া সমান’

কমছে তাপমাত্রা, শীত জেঁকে বসবে কবে?

১০

‘আ.লীগ নির্বিচারে মানুষ মেরে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে’

১১

তারেক রহমান সবসময় পাশে আছেন, থাকবেন : মীর হেলাল

১২

দশ দিনেও মুক্তি মেলেনি ৪ বাংলাদেশির

১৩

আজ টিভিতে যেসব খেলা দেখা যাবে

১৪

ছাত্রদল নেতাকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে

১৫

লেবাননে এক দিনে নিহত ৫৯

১৬

টাইম জোনের ধারণা এসেছে যেভাবে

১৭

সরকারের চাপে বাধ্য হয়ে ওজন কমালেন ৫৪২ কেজি

১৮

উত্তর আফ্রিকার মুসলিম দেশে নজর জিনপিংয়ের

১৯

‘উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছে আ.লীগ সরকার’

২০
X