রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র আবাসিক হলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধু হলের অভ্যন্তরে থাকা অন্তত ২০টি মোটরসাইকেল, ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত বেশ কয়েকটি কক্ষ, প্রাধ্যক্ষের কক্ষসহ বেশকিছু কক্ষে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কারের এক দফা দাবি এবং রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচিকে সফল করতে আগে থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকটি আবাসিক হলে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বের হওয়ার আগেই ছাত্রলীগ এবং হল প্রশাসন প্রত্যেকটা হলের প্রধান ফটোকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরই অংশ হিসেবে হল প্রশাসন ও ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের প্রধান ফটকেও তালা ঝুলিয়ে দেয়। এতে বঙ্গবন্ধু হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আটকা পড়ে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলকারী ছাত্ররা হলের প্রধান ফটকে তালা ভেঙে প্রবেশ করতে চাইলে প্রশাসন ও ছাত্রলীগ বাধা দেয়।
এ সময় সকল বাধা ছিন্ন করে করে হলের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। পরে হলের অভ্যন্তরে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থী বাইরে থেকে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে একযোগে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। প্রথমে শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু হলের অভ্যন্তরে থাকা ছাত্রলীগের অন্তত ২০টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে তারা হলটির দোতলায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। শুধু তাই নয়; ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের আশপাশে অবস্থিত ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত কক্ষগুলোতেও ভাঙচুর চালায় তারা। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলের ছাদে অবস্থান নেয়। ভাঙচুর চালিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা সেখান থেকে হলের বাইরে বেরিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে প্রত্যেক আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু হল প্রশাসন ও ছাত্রলীগ সবগুলো আবাসিক হলের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ছাত্রলীগের নেতারকর্মীর বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে আবাসিক হলগুলোর প্রধান ফটকের সামনে সশস্ত্র অবস্থান নিতে দেখা যায়। এরপর প্রত্যেকটি হলে সাধারণ শিক্ষার্থী বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করেও যখন পারছিলেন না তখন হলের সামনে সশস্ত্র অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের ওপর অতর্কিত ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। প্রথমে মাদারবখশ ছাত্র আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের সশস্ত্র মহড়া ও হলের প্রধান ফটকের তালা ভেঙ্গে লাঠিশোটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এরপর তারা মিছিল নিয়ে প্রত্যেক হলে হলে গিয়ে তালা ভেঙে আটকা পড়া শিক্ষার্থীদের বের করে নিয়ে আন্দোলনে যুক্ত হয়। প্রত্যেক হল থেকে লাঠিশোটা, লোহার পাইপ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডের দিকে আসতে থাকে। একপর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি বিশাল গ্রুপ বঙ্গবন্ধু হলের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়। বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক ও ভবনে বিক্ষোভ মিছিল করে রেলপথ অবরোধ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজারে অবস্থান করছে।
এ বিষয়ে জানতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার কল করা হলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, আমরা ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের বার বার বলেছি কোনো ধরনের সহিংসতা যাতে না হয়। কিন্তু আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে একটা গ্রুপ বঙ্গবন্ধু হলে হামলা চালায়। এতে হলের বিভিন্ন জিনিস ভাঙচুর এবং বেশ কিছু মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আমরা ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিটা হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি যাতে কোনো ধরনের সংগর্ষের ঘটনা না ঘটে। এ ছাড়া পুরো ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার ব্যাপার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্যে আমরা কাজ করছি। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা সর্বদা কাজ করে যাব।
মন্তব্য করুন