ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৪, ০১:০৭ এএম
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৪, ০৭:০৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ঢাবি ক্যাম্পাসে বহিরাগত এনে হামলার অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা বাস ও হামলাকারীরা। ছবি : কালবেলা
ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা বাস ও হামলাকারীরা। ছবি : কালবেলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় সোমবার (১৫ জুলাই) ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় জড়িয়েছে ছাত্রলীগ। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে বসে ছাত্রলীগ। সংঘর্ষের এ ঘটনায় অন্তত ২২০ আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে দাবি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে এনে হামলার কাজে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

সরেজমিনে গিয়ে হামলার ঘটনায় বহিরাগতদের সম্পৃক্ততার অভিযোগের সত্যতাও মেলে। দুপুরের আগ থেকেই দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা কলেজ, বাংলা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, তিতুমীর কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ বিভিন্ন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দলবেঁধে আসতে থাকেন। অনেক শাখা ছাত্রলীগকে পাবলিক বাস রিজার্ভ করে নিয়ে আসতেও দেখা যায়, যেগুলো হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়। তারা সবাই দুপুরের আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে জমায়েত হতে থাকে। বিকাল ৩টা পর্যন্ত এই জমায়েতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংখ্যা কয়েক হাজারে পরিণত হয়। যখন বিজয় একাত্তর হল, বঙ্গবন্ধু হল, জসীমউদ্‌দীন হল এবং জিয়া হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোটা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করে মলচত্বরে অবস্থান করছিল তখন মধুর ক্যান্টিন থেকে কেন্দ্রীয়, মহানগর এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাদের নেতৃত্বে সেখানে অবস্থান করা বহিরাগতসহ সব নেতাকর্মীকে নিয়ে মলচত্বর থেকে সম্মিলিতভাবে আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ করা হয়। এ সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজল কুণ্ডুর নেতৃত্বে হামলাকারী গ্রুপকে বেশ আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা যায়। এছাড়াও সাদা ক্যাপ পরুয়া বহিরাগত ছাত্রলীগের একটি গ্রুপকে সবচেয়ে বেশি আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা যায়। এর বাইরে হামলার সময় বহু কিশোর বয়সী ব্যক্তিদের দেখা যায়, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন বলে দাবি অনেকের।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর জমায়েতে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ হামলা করলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পেরে ওঠার কথা নয়। ছাত্রলীগ ঢাকার প্রায় প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীদের নিয়ে এই সম্মিলিত হামলাটা শিক্ষার্থীদের ওপর চালিয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সহসমন্বয়ক রিফাত রশীদ বলেন, ক্যাম্পাসে টোকাইদের বাস ভরে ভরে নিয়ে আসাটা যে ভিসি-প্রক্টরের ছত্রছায়ায় হলো, হাজারো শিক্ষার্থীর রক্তের দাগ যে ভিসি-প্রক্টরের হাতে, তাদের আজীবন বহিষ্কার চাই।

নজরুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ধোলাইখালের ট্রাক শ্রমিক ও টোকাইরা চলে গেলে ঢাবি ছাত্রলীগ ১ মিনিটও দাঁড়াতে পারবে না। তাদের জন্যই এরা বহিরাগতদের নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার সাহস পায়।

আয়মান মুনীর নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বঙ্গবন্ধু হলের পেছনের গেট দিয়ে তিতুমীর কলেজ ও বাংলা কলেজের হাজার হাজার বহিরাগত বঙ্গবন্ধু হলে প্রবেশ করেছে। হামলার পূর্বে আরেক শিক্ষার্থী জানান, নীলক্ষেত থেকে বহিরাগত প্রবেশ করেছে ঢাবিতে। তাদের হাতে বাঁশ এবং হেলমেট রয়েছে।

তাহমিদ হাসান নামে এক শিক্ষার্থী হামলার পূর্বে বলেন, বহিরাগতদের বাসগুলো মুহসীন হলের মাঠে আছে। আজকে ছাত্রলীগের সমাবেশ উপলক্ষে, ক্যাম্পাস থেকে নেতাকর্মী সংকটের আশঙ্কা থেকে বহিরাগত টোকাই নিয়ে এসেছে। শাকিল মিয়া বলেন, শহীদুল্লাহ্ হল, এফএইচ হলে বহিরাগত টোকাইরা হেলমেট পরিধান করে হামলা করেছে।

ঢাবি শিক্ষার্থী সোহরাব হোসেন বলেন, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে আসছে কারা? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আমাদের হলে হলে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে।

এনামুল হাসান অন্বয় নামের একজন বলেন, সন্ত্রাসীরা ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে অছাত্র, বহিরাগত ও টোকাই ভাড়া করে এনে আন্দোলনকারীদের পিটিয়েছে। রাকিবুল হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বহিরাগত টোকাই দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের উপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ।

মেহেদি হাসান শান্ত নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগত আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, টোকাই সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলা হয়েছে আজ। রাতের অন্ধকারে বাইক, বাস, ট্রাকভর্তি বহিরাগতদের ঢাবিতে এনে হামলার প্রস্তুতি নেয় ছাত্রলীগ। দা, চাপাতি, রড ও লাঠি নিয়ে আন্দোলনকারীদের রক্তাক্ত করেছে ছাত্রলীগ।

প্রসঙ্গত, ঘটনার সূত্রপাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল থেকে। টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে চলা কোটাবিরোধী সমাবেশে হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের একটি দল দুপুর আড়াইটার দিকে একটি মিছিল নিয়ে বিজয় একাত্তর হল এলাকায় আসে। এ সময় বিজয় ৭১ হলেন ভিতরে অবস্থান করা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের দিকে জুতা, বোতল এবং পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এমনকি কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করে মারধরও করতে থাকে। মারধরের শিকার এক শিক্ষার্থীকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে এমন খবর শুনে টিএসসির সমাবেশে অবস্থানরত সব শিক্ষার্থীই মিছিল নিয়ে বিজয় একাত্তর হলের দিকে আসতে থাকে। এ সময় তাদের কারো কারো হাতে লাঠিসোটা দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা আসার সঙ্গে সঙ্গে বিজয় একাত্তর হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ফের ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে, শিক্ষার্থীরাও আক্রমণাত্মক হয়ে ছাত্রলীগকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে এবং হল গেটের গার্ড রুমের কাচ ভাঙচুর করে। এ অবস্থা চলাকালে বঙ্গবন্ধু হল, জসিমউদ্‌দীন হল এবং মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রড, লাঠি, লোহার পাইপ, বাঁশ, হকিস্টিক, স্ট্যাম্প নিয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করে। এক সময় আন্দোলনকারীরাও সংঘটিত হয়ে ছাত্রলীগকে ফের ধাওয়া করে। এভাবে কয়েক দফায় ধাওয়া-পালটাধাওয়া চলতে থাকে।

একপর্যায়ে, শিক্ষার্থীরা পিছু হঠে ভিসি চত্বরে গিয়ে অবস্থান করা শুরু করলে মুহসীন হল, সূর্যসেন হল, বিজয় একাত্তর হল, জিয়া হল, বঙ্গবন্ধু হল এবং জসিমউদ্‌দীন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এক জোট হয়ে মলচত্বর পর্যন্ত চলে আসে এবং আন্দোলকারী যাকে পায় তাকেই মারধর করতে থাকে। তার একটু পরেই, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ মহানগরসহ আশপাশের বিভিন্ন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের নেতৃত্বে মধুর ক্যান্টিনের দিক থেকে মলচত্বরে এলে সেখানে অবস্থানরতদের নিয়ে ভিসিচত্বরে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর এক যোগে হামলা করে। এ সময় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ নীলক্ষেতের দিকে ও আরেকটি অংশ ফুলার রোডের দিকে দৌড়াতে থাকে। অনেকেই আটকে পড়ায় তাদের ধরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ব্যাপক মারধর করে। একপর্যায়ে, ভিসিচত্বর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছাড়লে কয়েক হাজার ছাত্রলীগ নেতাকর্মী পুরো ক্যাম্পাসে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শোডাউন দেয়।

এরপর আন্দোলনকারীদের হঠিয়ে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দখলে নেয় ছাত্রলীগ। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে শেখ রাসেল টাওয়ার এলাকায় কিছু আন্দোলনকারীকে ধরে ফের মারধর করে এবং সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসারতদেরও মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ সময় তারা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আহত হওয়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা প্রদান করতে বাধা প্রদান করে।

এর আগে সাড়ে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করে আইন প্রণয়নের এক দফা দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তার আগে, গত রোববার (১৪ জুলাই) রাত ৪টার দিকে এক ভিডিও বার্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জনবল নেবে মধুমতি ব্যাংক, ৩৫ বছরেও আবেদন

রাজশাহীতে গণপিটুনিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নিহত 

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

দেশে ফিরলেন আমিরাতে ক্ষমা পাওয়া ১৪ বাংলাদেশি

আজকের নামাজের সময়সূচি

শহীদ আমিনুলের সন্তানদের দায়িত্ব নিল ইত্তেফাকুল উলামা

রোববার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

মিছিলে বিএনপি নেতার গুলির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

রৌমারীতে ব্যবসায়ীদের আহ্বায়ক কমিটির শপথ অনুষ্ঠিত

৬৫ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়ায় মামুনের বিরুদ্ধে যুবদলের মামলা

১০

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

১১

ক্ষমা পেয়ে আমিরাত থেকে ১২ জন ফিরছেন চট্টগ্রামে

১২

‘ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকার দুই ভাবে পরাজিত’

১৩

মহানবীকে (সা.) কটূক্তিকারী সেই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা

১৪

শিবচর আঞ্চলিক সড়কে গ্রামবাসীর বৃক্ষরোপণ

১৫

মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকার চেষ্টার অভিযোগ ধামাচাপা, ৭ দিন পর ফাঁস

১৬

১২ দিনেও মেলেনি রানীনগরে নিখোঁজ নার্গিসের সন্ধান

১৭

দায়িত্বশীলদের নিয়ে সাতক্ষীরায় ছাত্র শিবিরের সমাবেশ

১৮

আযহারী শিক্ষার্থীরা হবে বাংলাদেশ ও মিশরীয় ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন : মিশরীয় রাষ্ট্রদূত

১৯

রাজশাহীতে বস্তাভর্তি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

২০
X