নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিক্ষক সংকটের মধ্যে দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ঝিনাইদহ মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যাান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস)। শিক্ষক সংকট থাকায় চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী নিরাপত্তারক্ষী দিয়েও চলছে পাঠদান। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ভর্তিসহ নানা খাতে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
এদিকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলা হয়েছে, লোকবল ও শিক্ষক সংকট থাকায় এমন অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পদ সৃষ্টি করে লোকবল নিয়োগ দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে।
আরও পড়ুন : কোর্স কারিকুলাম সংশোধনে ম্যাটস শিক্ষার্থীদের ৩ দফা
সূত্র মতে, ঝিনাইদহ শহরের বিসিক শিল্পনগরী সংলগ্ন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) আনুষ্ঠানিকভাবে গত ২০১০ সালে চালু হয়। চালু হওয়ার পর থেকে কোনো পদ সৃষ্টি না হওয়ার কারণে সংযুক্ত হিসেবে একজন অধ্যক্ষ, একজন প্রভাষক ও একজন কর্মচারী দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতি বছরে দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা এ প্রতিষ্ঠানে তিনটি ব্যাচে ভর্তি হয়ে পাঠ গ্রহণ করে থাকেন। গত ২০২০ সালের পরে দু-ধাপে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক ১০ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
এ নিয়োগে অফিস সহকারী, নিরাপত্তা প্রহরী, লাইব্রেরিয়ান, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও বাবুর্চি হিসেবে তারা দায়িত্ব পালন করেন। এরই মাঝে এ বছরের জুনে তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। লোকবল ও পদ সৃষ্টির অভাবে তারা এখনও দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। চুক্তিভিত্তিক এ নিয়োগে শিক্ষক সংকট থাকার কারণে নিরাপত্তা প্রহরী আবুজার গিফারীকে খণ্ডকালীন কম্পিউটার অপারেটর ও শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দেন এ প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে বাবা আকবর আলী অফিস সহকারী ও ছেলে নুরুজ্জামান রাসেলকে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে নিয়োগ দেন।
সাবেক শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান, সুজন ও সোহান অভিযোগ করে জানান, এ প্রতিষ্ঠানে পদ সৃষ্টি না হওয়ার কারণে একদিকে শিক্ষক ও লোকবল সংকট, অন্যদিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কর্মরত আকবর ও তার ছেলে রাসেলের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে নিরাপত্তা প্রহরী দিয়ে পাঠদান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী ও লাইব্রেরিয়ান যোগসাজশে প্রতিবছর ভর্তির সময়ে শিক্ষার্থী প্রতি মসজিদের চাঁদা বাবদ এক হাজার টাকা, গেমস অ্যান্ড কমন রুম বাবদ ৫০০ টাকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ২০০ টাকাসহ বিবিধ দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেন। এ ছাড়াও নাম সংশোধন ও সনদপত্র উত্তোলনসহ বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজে তারা অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেন।
আরও পড়ুন : বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় কোটি টাকা হরিলুট!
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা প্রহরী আবুজার গিফারি জানান, আমাকে প্রথমে ২০১৯ সালে অস্থায়ীভাবে কম্পিউটার অপারেটর ও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরে ২০২০ সালে চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে যোগদান করি। কর্তৃপক্ষ আমাকে শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করার অনুমতি দিয়েছে। সে কারণে আমি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করিয়ে থাকি।
এ দিকে অফিস সহকারী আকবর আলী জানান, তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, ভর্তি কার্যক্রমের সময় অনেক সুপারিশে বিবিধ টাকা নেওয়া হয় না। তবে যে সব খাতে টাকা নেওয়া হয় সবই ব্যাংকে জমা হয়।
তবে মসজিদের টাকা তছরুপের বিষয়ে লাইব্রেরিয়ান নুরুজ্জামান রাসেল জানান, মসজিদের নামে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকার কারণে নগদ টাকা গচ্ছিত আছে। আমি কোনো অনিয়ম করেনি।
তবে প্রতিষ্ঠানের সংযুক্ত অধ্যক্ষ ডা. আব্দুল মোমেন জানান, লোকবল ও শিক্ষক সংকটের কারণে আমাদের পাঠদান করানোসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। চুক্তিভিত্তিক ১০ জন নিয়োগ থাকলেও তাদের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে মেয়াদ বাড়ানোসহ আর্থিক অনিয়ম করলে তাদের সংশোধন করা হবে। আর প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে চালাতে হলে অব্যশই পদ সৃষ্টি করে লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। আমরা ঢাকাতে একাধিকবার চিঠি দিয়েও লোকবল পাচ্ছি না।
মন্তব্য করুন