সরকারি চাকরিতে বেতন কাঠামোর ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে (আগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির) মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটাপদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহালে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিবাদে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করেছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
রোববার (৭ জুলাই) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এসময় দুই দফা দাবি জানায় জোটটি। এ দাবিগুলো হলো- বৈষম্যমূলক মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করতে হবে ও অনগ্রসর জাতিসত্তা ও বঞ্চিত শ্রেণির জন্য যৌক্তিক মাত্রায় কোটা নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে এদেশের তরুণ ছাত্রসমাজ আন্দোলন করে আসছে। সর্বশেষ ৫ জুন ২০২৪ তারিখে হাইকোর্টের একটি রায়ের প্রেক্ষিতে আবারও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা চালু হওয়ায় সারা দেশের ছাত্রসমাজ আন্দোলনে নেমেছে। ইতোমধ্যে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে লাগাতার আন্দোলন চলছে। রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের লড়াকু অবস্থানের প্রতি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট একাত্মতা পোষণ করছে। একই সঙ্গে কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সারা দেশে সচেতন ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বৈষম্যমূলক আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় ক্রমেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য, আপাত অর্থে সমতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কোটা প্রথার প্রচলন। অথচ ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক স্বার্থে এদেশে কোটা প্রথা নিজেই বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়াল। যার বাস্তব উদাহরণ হলো মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর আজও ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা হয়েছে। অথচ কোটা ব্যবস্থা কোনোক্রমেই স্থায়ী ব্যবস্থা নয়। ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এক নির্বাহী আদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান ও ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয়। সময় এবং আর্থসামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র কোটা ব্যবস্থায় ধারাবাহিক সংস্কার করা। যেখানে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ছিল, সেখানে এখনও অস্বাভাবিক মাত্রায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। অথচ ৫৩ বছর পরও বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা জারি রাখার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মর্মবস্তুকে অস্বীকার করা হয়েছে। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার মধ্য দিয়ে সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদের প্রকৃত সুফল থেকে জনগণকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের এই সমন্বয়ক বলেন, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের অভাবে কোটা প্রথার যুগোপযোগী সংস্কার না হওয়ায় চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে কেউ কেউ সমস্ত কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি করছেন। বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার হওয়া জনগণের এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া খুব অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সম্পূর্ণ কোটা প্রথা বাতিল করা কি সমাধান? আমরা তা মনে করি না। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১১ এপ্রিল ১৮ তারিখে শেখ হাসিনা ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। এই চটকদার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে প্রতিবন্ধী, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ২০১৮ সালে ছাত্রদের দাবি ছিল কোটা সংস্কারের। অথচ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে বিভ্রান্ত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়। মাত্র ছয় বছরের মধ্যে হাইকোর্ট সেই পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করে। ফলে কোটা বাতিল কোনোভাবেই সমাধান নয় প্রয়োজন কোটার যৌক্তিক সংস্কার।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, ছাত্র ফেডারেশনের সহসভাপতি দীপা মল্লিক এবং বিপ্লবী ছাত্র যুবআন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তওফিকা প্রিয়া।
মন্তব্য করুন