রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৫:২৩ পিএম
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৫:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আন্দোলনে উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত রাবি শিক্ষার্থীরা। ছবি : কালবেলা
কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত রাবি শিক্ষার্থীরা। ছবি : কালবেলা

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল ও প্রত্যয় পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের আন্দোলনে উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস। সোমবার (৪ জুলাই) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে জড় হতে থাকে কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বৃষ্টির মধ্যে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন।

এদিকে বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের প্রধান ফটকে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহার এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষকরা। একই দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারাও।

সরেজমিনে দেখা যায়, কোটা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বেলা ১০ টার দিকে দল বেধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে উপস্থিত হতে থাকেন। পরে মিছিল নিয়ে তারা প্যারিস রোড থেকে মেইন গেটের দিকে অগ্রসর হন। রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। দুপুর ১২ টার দিকে তারা মেইন গেট থেকে মহাসড়ক ধরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কাজলা গেটের দিকে অগ্রসর হন এবং বেলা পৌনে ১টায় আবার প্যারিস রোডে এসে নতুন কর্মসূচির ডাক দিয়ে আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তবে এ সময় কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।

আন্দোলন কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আজিজুর রহমান বলেন, দেশের কোটা প্রথায় উপযোগী জনসংখ্যার সংখ্যা ১ শতাংশের কম কিন্তু তাদের জন্য কোটা ৫৬ শতাংশ। এমনিতেই দেশের চাকরির বাজার প্রতিযোগিতাপূর্ণ। সেখানে কোটায় অধিকাংশ সিট চলে গেলে আমাদের প্রতিযোগিতা আরও বাড়িয়ে দেয়। আমাদের দাবি ২০১৮ সালে কোটা নিয়ে যে সিদ্ধান্ত এসেছিল তা পুনর্বহাল থাকুক।

আন্দোলনে উপস্থিত আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষার্থী সানজিদা ঢালি বলেন, আমরা মেয়েরা মনে করি আমরা পিছিয়ে পড়া জাতি না। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবহারকারীরাও যে পিছিয়ে পড়া জাতি না আমরা এইটা জানি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল ভিত্তি ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা। সেই বৈষম্য দূর করতে চাইলে ৫৬ শতাংশ কোটা রাখার মানে হয় না। আমরা চাই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পুরোপুরি বাতিল করা হোক এবং অন্যান্য চাকরিতে তা পুনর্বিন্যাস করা হোক।

এ সময় কোটা পুনর্বিন্যাস ও নতুন নীতিমালা প্রদানের আহ্বান জানিয়ে পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ খান বলেন, প্রথমত, ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কার। দ্বিতীয়ত, ব্যাক্তি তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ একবার কোটা ব্যাবহার করতে পারবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তৃতীয়ত, প্রতি জনশুমারির সাথে অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে বিদ্যমান কোটার পুনর্মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিবেকের তাড়নায় এখানে উপস্থিত হয়েছি। এ রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে প্রধান কারণগুলো হলো সমতা ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত রাখা। রাষ্ট্রের চোখে সকল নাগরিক সমান। এ বিষয়ে কোনো বিভেদ সৃষ্টি করলে সেটা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থি।

তিনি আরও বলেন, সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ তারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। তারা রাষ্ট্রের জন্য যেটি কল্যাণকর মনে করবে সেটিই বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি বঙ্গবন্ধু ৭২ সালে যে কোটা দিয়েছিলেন সেটা ছিল যুদ্ধরতদের জন্য, কারণ তারা পড়াশোনা করতে পারেননি। তখন যারা বেঁচে ছিলেন তাদের জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধে যে নারীরা আহত হয়েছিলেন তাদের জন্য। তিনি সন্তান বা নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা দেননি। কিন্তু বর্তমানে নাতি-নাতনিরাই এটার সুবিধা নিচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এটি আমাদের সংবিধানের পরিপন্থি। আজকে যেভাবে মেধাকে বঞ্চিত করে জাতিকে মেধা শূন্য করার ষড়যন্ত্র চলছে এভাবে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারে না।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।

এদিকে শিক্ষকদের কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকার বলেন, আমাদের হিসাব কিংবা আইন বুঝিয়ে লাভ নেই। রাতের অন্ধকারে প্রজ্ঞাপন দেবেন। আবার সেটা সংশোধনও করবেন। তার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? এই প্রত্যয় স্কিমের দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয় ছাড়া কেউ নিচ্ছে না। শুধু এই মন্ত্রণালয়ে যারা বসে আছেন তারাই কী সব? আমাদের কী বিশেষজ্ঞ কেউ নেই? আমাদের এর পরিবর্তে নতুন কিছু চিন্তা ভাবনা দরকার। আমাদের সঙ্গে বসে কথা বলেন কেন আমরা এটাকে যৌক্তিক দাবি বলছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণায় ও পড়াশোনায় থাকতে চায়। তাদের রাস্তায় নামাবেন না।

এ কর্মসূচিতে রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, সরকারের সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি খুবই প্রশংসনীয় ও জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ ছিল, কিন্তু যারা এর দায়িত্বে ছিল তারা সফলভাবে এই উদ্যোগকে বিতর্কিত করেছে। তবে আমরা প্রত্যয় স্কিম বাতিলের কথা বলছি না। প্রত্যয় স্কিমে ৪০৩ ধরনের শ্রেণি রয়েছে। তারা যেহেতু কোনো আন্দোলন করছে না, সেহেতু আমরা তাদের দায়িত্ব নিতে পারব না। আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি, এই প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নাম প্রত্যাহার করার জন্য। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের এ অবস্থান কর্মসূচিকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে তারা সফল হবে না। আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাব।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকারের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজের ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অসুস্থ কারারক্ষীর সঙ্গে জেলারের অমানবিক আচরণ

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পদে এনআরবিসি ব্যাংকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

ইইউভুক্তির চেষ্টায় তুরস্ক / হাঙ্গেরি ঘিরে যে আশায় এরদোয়ান

কোটা আন্দোলন নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

পুলিশ না পারলেও মালিককে চিনে নিল মহিষ

কাল থেকে টিসিবির পণ্য পাবেন ফ্যামিলি কার্ডধারীরা

কোটা-পেনশন স্কিম বাতিলের আন্দোলন নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাল জামায়াত

বিক্ষোভে উত্তাল ইসরায়েল, অবরুদ্ধ রাজধানী

সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি দিলেন আ.লীগ নেত্রী রানী

সাপের কামড়ে শিক্ষার্থীসহ দুজনের মৃত্যু

১০

মিডিয়া কি তবে আত্মহত্যায় প্ররোচনা জোগাচ্ছে!

১১

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় শেখ হাসিনার ভূমিকা বিশ্বে অন্যতম : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

১২

রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পর্শ হয়ে ৫ জনের মৃত্যু

১৩

বাবার স্বাধীন করা দেশ ব্যর্থ হতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী 

১৪

এইচএসসি পরীক্ষায় দায়িত্বে অবহেলা, তিন শিক্ষককে অব্যাহতি

১৫

কোচের সঙ্গে সংঘর্ষে কেইনকে নিয়ে সংশয়

১৬

দেশের ১২ জেলায় নিয়োগ দেবে ইউএস-বাংলা

১৭

বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি কমলেও বাড়ছে বন্যার্তদের দুর্ভোগ

১৮

বিশ্বসেরা গোলকিপারকে চায় না ম্যানইউ

১৯

ঢাবির হলে ছাদের পলেস্তারা খসে আহত শিক্ষার্থী 

২০
X