সরকারি চাকরিতে বেতন কাঠামোর ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে (আগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির) মুক্তিযোদ্ধা কোটা আপাতত বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। এই ঘোষণার পরপরই পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শাহবাগে অবস্থানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে কোটা পদ্ধতি বাতিল চাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের কলাপসিবল গেট আটকে শিক্ষার্থীদের বের হতে বাধা দিচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ফলে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বেলা ১১টায় কোটা আন্দোলনের মিছিল হওয়ার কথা থাকলেও কর্মসূচির অজুহাত দিয়ে কিংবা সরাসরি বাধা দিয়ে শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট হতে বাধা দিচ্ছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের গেটে অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগের ক্যান্ডিডেটরা, সূর্যসেন হল গেট তালা লাগিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং বের বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। জসিম উদ্দিন হলের চারতলায় আটকে রাখা হয়েছে শিক্ষার্থীদেরকে।
সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থীরা এক জোট হয়ে মিছিল নিয়ে হলগেটে আসে কিন্তু ছাত্রলীগ নেতারা তাদের ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে হুমকি দেয়। একইসঙ্গে হলগেটে তালা মেরে দেয়।
সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি মাহফুজুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাকিল হোসেন, ঝুমা সাধারণ সম্পাদক রাকিব হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুন্সী রাকিব হোসেন, সহসভাপতি মনির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ খান শৈশব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুজ্জামান অভি, যুবরাজ, প্রচার সম্পাদক ফয়সালসহ অনেকে এই কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন।
আটক থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জাবেদ বলেন, আমরা আমাদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে যেতে চাই কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হল থেকে বের হতে দিচ্ছে না। ভিতরের ও বাহিরের গেট আটকে দিয়েছে। তারা হলগেটে অবস্থান করছে। যারাই হলগেটে যাচ্ছে তাদেরকে ফিরিয়ে দিচ্ছে।
মুহসীন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, সূর্যসেন হলে আমাকেও আটকিয়েছিল। তারা বলে এক ঘণ্টার জন্য বের হওয়া যাবে না। পরে বলছি আমি মুহসীন হলের। তারপরও জেরা করেছে। পরে জার্সিতে মুহসীন হল লেখা দেখে আমাকে ছাড়ে।
সূর্যসেন হলের গেটম্যান বলেন, আমরা গেটের দায়িত্বে আছি ঠিকই কিন্তু হলগেটে ছাত্রলীগের ছেলেরা তালা মেরেছে। পোলাপানদের মিছিলে যেতে না করেছে। এখন হল চালায় ছাত্রলীগ, আমাদের কাছে নিয়ন্ত্রণ নেই।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার বিষয়টি বানোয়াট। যেহেতু কোটা পদ্ধতি থাকবে নাকি থাকবে না তা সম্পূর্ণ আইনগত বিষয়। যেহেতু বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় আছে।
প্রসঙ্গত, একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জুন ২০১৮ সালের কোটা ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত পরিপত্র বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। এই রায়ের বিপক্ষে সেদিন থেকেই আন্দোলনে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। লাগাতার আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল বুধবারও রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা। সেই কর্মসূচি থেকে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে একই স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা আসে।
মন্তব্য করুন