গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পেনশনসংক্রান্ত (প্রত্যয় স্কিম) প্রজ্ঞাপনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো পূর্ণদিন কর্মবিরতি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা মেডিকেল সেন্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অসুস্থ শিক্ষার্থীরা মেডিকেল সেবা নিতে পারছেন না। যদিও সেন্টার কর্তৃপক্ষ বলছে, জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার (১ জুলাই) শিক্ষার্থীদের অনেকেই মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে দেখেন, কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন না, এমনকি ডাক্তাররাও অনুপস্থিত। এতে তাদের মাঝে এক প্রকার ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মধ্যকার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ঢাবির এই মেডিকেল সেন্টারসহ কোনো মেডিকেল বন্ধ হয়েছে এমন শোনা যায়নি।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে সেবা না পেয়ে ফিরে আসা হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের অসুস্থ এক শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন খোকা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ নামে এক ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি জানান। এরপরই এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করতে থাকেন তারা।
সাব্বির হোসেন খোকা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও কোথাও মেডিকেল বন্ধ ছিল, এমনটা শোনা যায়নি। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার আজ বন্ধ কর্মবিরতির কারণে। এ কেমন কর্মবিরতি?
তিনি বলেন, আমি আজ অসুস্থ। তাই মেডিকেলে যাওয়ার পর দেখলাম, ডাক্তার নেই। এরপর গেলাম মেডিকেল সেন্টার প্রধান ডা. তানভীর আলীর রুমে। ভাবছিলাম তার কাছে জানতে চাইবো, গিয়ে দেখি তিনিও নেই। ২ জন লোক বসে আছেন তার রুমের সামনে। জানতে চাইলাম মেডিকেল রেখে কোথায় গেছে সবাই? বললো, কর্ম বিরতিতে।
খোকা কালবেলাকে আরও বলেন, আমি যখন গিয়েছিলাম তখন আরও কয়েকজন প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত রোগী ঘুরে গিয়েছে। বিষয়টি আমার কাছে খারাপ লাগলো। এটা এক ধরনের অমানবিকতা। কারণ, আমি যতদূর জানি মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আমাদের এই মেডিকেল সেন্টারের সেবা বন্ধ হয়নি।
মো. দেলোয়ার হোসেন নামে আরেক শিক্ষার্থী খোকার পোস্টের কমেন্টে লেখেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের জাস্ট ঢাল বানিয়ে তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চাচ্ছে যেকোনো উপায়ে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের কি হলো না হলো, সেটা দেখার প্রয়োজনবোধ তারা করছে না।
জান্নাতুল ফেরদৌস রিফা নামে আরও এক শিক্ষার্থী বলেন, নিজেদের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা না করে সবকিছু বন্ধ করে দিলো, অথচ শিক্ষার্থীদের কোনো বিষয়ে তাদের কিছু যায় আসে না।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার (সিএমও) ডা. মো. তানভীর আলী বলেন, জরুরি বিভাগ চালু করা হয়েছে। প্যাথলজিক্যাল ও অন্যান্য সেকশন কর্মবিরতির কারণে বন্ধ আছে। এই পর্যন্ত ৪৮ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন