কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সুযোগ পেয়েও আর্থিক সংকটে মেডিকেলে ভর্তি অনিশ্চিত

রেজওয়ান আহমেদ । ছবি : কালবেলা
রেজওয়ান আহমেদ । ছবি : কালবেলা

মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। তার মধ্যে একজন, রেজওয়ান আহমেদ। গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েও পরিবারের আর্থিক সংকটে ভর্তি ফি জোগাড় করার সমস্যা নিয়ে তিনি হতাশাগ্রস্ত।

রেজওয়ান জানায়, তার জন্য মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এই সুযোগ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের সমস্যার কারণে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

রেজওয়ান আহমেদের বাড়ি উপকূলীয় অঞ্চল খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সাতহালিয়া গ্রামে। তার বাবা ইব্রাহিম খলিল স্থানীয় একটি মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে চাকরি করেন এবং মা আছিয়া খাতুন গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে রেজওয়ান মেজ। ভাইবোনেরা স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করছেন।

রেজওয়ান আহমেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্কুলের পাঠ্যবই কেনার টাকা নিয়ে তার পরিবার প্রায়ই সমস্যায় পড়ত। তবে, সে কখনোই থেমে থাকেনি। অনেক না পাওয়ার মধ্যে বেড়ে উঠলেও তিনি শিক্ষাজীবনে প্রতিটি ধাপে সাফল্য পেয়েছেন। গ্রামের সাতহালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক পাস করার পর ভর্তি হন গিলাবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ২০২১ সালে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে খুলনা সুন্দরবন কলেজে ছেলেকে ভর্তি করান রেজওয়ানের বাবা। সেখানেও জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্য আনেন রেজওয়ান। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। এবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কয়রা উপজেলা থেকে একমাত্র রেজওয়ান গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

রেজওয়ান আহমেদের বাবা ইব্রাহিম খলিল বলেন, আমি অল্প বেতনে চাকরি করি। ২০১৫ সালে হঠাৎ আমার হৃদ্‌রোগ ধরা পড়ে। দীর্ঘদিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। এখন ধারদেনার মধ্যে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতি মাসে ঋণের কিস্তি দিতে হয়। ছেলেটার মেডিকেলে ভর্তি আর পড়ালেখার খরচ বহন করার মতো সামর্থ্য আমার নেই। আগামী মাসের ২ থেকে ৮ তারিখের মধ্যে ছেলেকে ভর্তি করাতে হবে। এখনো ভর্তির টাকাই জোগাড় করতে পারিনি। এখন খুব দুশ্চিন্তায় আছি।

সাতহালিয়া গাউসুল আযম দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, রেজওয়ান ছোট থেকেই নম্র, ভদ্র স্বভাবের একটি ছেলে। লেখা পড়ার প্রতি তার ছিল প্রবল ইচ্ছে শক্তি। রেজওয়ানের বাবা ইব্রাহিম খলিল আমার প্রতিষ্ঠানে সামান্য বেতনের একজন কর্মচারী। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ একদিকে পরিবার অন্যদিকে ছেলের ভর্তি নিয়ে খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সবার দায়িত্ব, মেধাবী শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়ার জন্য সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের সবার দায়িত্ব, মেধাবী শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়ার জন্য সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যাতে আর্থিক অভাবে কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী তাদের স্বপ্নপূরণে বাধাগ্রস্ত না হয়।

রেজওয়ান আহমেদ বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন দেখেছি। প্রথমবার না পারলেও এবার আমি ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। তবে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই খারাপ, এখন ভর্তির জন্য যে টাকা প্রয়োজন, তা জোগাড় করতে পারছি না। আমার বাবা-মা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন, কিন্তু এটি অনেক বড় পরিমাণ টাকা, যা আমাদের জন্য জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। আমার পড়া লেখা করানোর জন্য বাবা মা অনেক কষ্ট করেছে। তাদের কষ্ট ঘোচানোর জন্য আমি একজন মানবিক চিকিৎসক হতে চাই। এখন আমার স্বপ্নপূরণে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশে কারখানা বানাতে চায় তুরস্কের প্রতিষ্ঠান

সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা, যুবক গ্রেপ্তার

আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা

আইসিডিডিআরবিতে হাজারেরও বেশি চাকরিচ্যুতির চিঠি

সামরিক প্রধান নিহত, নিশ্চিত করল ফিলিস্তিন

ময়লার ভাগাড়ে কান্না করছিল নবজাতক, অতঃপর...

নির্বিঘ্নে সভা—সমাবেশ করার অধিকার চায় সনাতনী জাগরণ জোট

‘তোরা সমন্বয়ক’ বলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলা

নরসিংদীতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ইউপি সদস্য আহত

চাপের মুখে হাতকড়া পরলেন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী

১০

রাজবাড়ী জেলা বারের সভাপতি বাচ্চু, সম্পাদক রাজ্জাক

১১

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নামে মিয়ানমারের ভিডিও প্রচার

১২

মেঘনা নদীতে দুগ্রুপের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ২

১৩

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন

১৪

বনের জমি উদ্ধার করতে গিয়ে আহত ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী

১৫

ভারতে পাচার ১৬ কিশোর-কিশোরীকে বেনাপোলে হস্তান্তর

১৬

গাউসুল আজম মার্কেটে অস্থিরতার চেষ্টা, অভিযোগ ব্যবসায়ীদের

১৭

বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে যা জানাল র‍্যাব

১৮

অসম্মান-মানসিক চাপে বিদ্রোহের সুর, কাঁদলেন নারী ফুটবলাররা

১৯

আন্দোলনের মুখে পঞ্চগড়ের চার বিচারকের বদলি

২০
X