জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দীন বলেছেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যুক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা থাকার প্রচলনও শুরু করা হয়। আমরা মনে করি, গুচ্ছের আড়ালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের পাঁয়তারা করা হয়েছে।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. রইস উদ্দীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আসছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী কিছু ব্যক্তি নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর গুচ্ছ চাপিয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে এ পদ্ধতির মাধ্যমে সেশন জট তৈরি করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সুবিধা দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান করার পাঁয়তারা অনেকে চালিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের ভর্তি সংক্রান্ত দুর্ভোগ কমানো, আর্থিক খরচ কমানো ও শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে ২০২১ সালে শুরু হয় সমন্বিত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি। তবে ভোগান্তি লাঘবের কথা বললেও কোনো লক্ষ্যই পূরণ করতে পারেনি বলে মনে করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্বকীয়তাকে ক্ষুণ্ন করে একটি গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর গুচ্ছ চাপিয়ে দেওয়া হয় বলে মন্তব্য করেন তারা। সংবাদ সম্মেলন শেষে শিক্ষক সমিতির নেতারা এক বিবৃতিতে বলেন, ২০২১ সাল থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে আন্দোলন করে আসছে। গুচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করার পিছনে ষড়যন্ত্র ছিল বলে পূর্বের শিক্ষক সমিতি মনে করেছে এবং গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে বহু মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো কিছু স্বার্থান্বেষী চক্রের কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত করার পর আর বের করা যায়নি।
এ ছাড়া তারা বলেন, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা থেকে বেরিয়ে আগের মতো নিজস্ব পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এ সিদ্ধান্তের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ রয়েছি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অভিযোগ করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অধিক টাকা পাওয়ার আশায় জিএসটির বাহিরে গিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে চাচ্ছেন। বিষয়টি মোটেও ঠিক নয়। একটি পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ২০১৮-১৯ সেশনে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় একজন শিক্ষক ইনভিজিলেশনের বাহিরে যে টাকা পেতেন জিএসটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ২০২০-২১ সালে শিক্ষকরা গড়ে ৭৫% টাকা বেশি পেয়েছেন।
২০২২-২৩ সালে সেটি প্রায় ২৫০% পার হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও মর্যাদা বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকরা গুচ্ছ থেকে বের হয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু তাই নয়, গত চারটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েই ৩৬০টি আসন ফাঁকা আছে। যেটা নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষায় কখনোই থাকেনি।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেতারা বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সরকার থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি তৈরি করে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একই পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে এবং সুন্দর ব্যবস্থাপনা হলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সেক্ষেত্রে সম্মতি দেবেন। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমান ভর্তি পরীক্ষার প্রসেস চলমান থাকবে এবং ঘোষণাকৃত নির্দিষ্ট তারিখে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
মন্তব্য করুন