কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল সারা দেশ। দেশব্যাপী সংঘাত-সংঘর্ষের কারণে আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ জনগণ। বিপাকে পড়েছে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছুকরা। অনেক কলেজে ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে শিক্ষার্থীদের এসএমএস পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সংঘাতের কারণে আতঙ্কে অনেকেই কলেজে যেতে পারছে না।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) আন্তঃশিক্ষা বোর্ড আনুষ্ঠানিকভাবে একাদশে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। সংঘাত-সংঘর্ষের কারণে কোনো শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভর্তি হতে না পারলে প্রয়োজনে সময়সীমা বাড়ানো হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে একাদশে ভর্তি নিয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার কালবেলাকে বলেন, দেশব্যাপী সংঘাতের কারণে আমরা আজ বৃহস্পতিবার ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। এ ছাড়া স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে। তবে কলেজ বন্ধ থাকলেও অফিস খোলা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা চাইলেই ভর্তি হতে পারবে।
তিনি বলেন, আগামী ২৫ জুলাই পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে। তবে কেউ যদি আতঙ্কের কারণে বা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে ভর্তি হতে না পারে, তবে প্রয়োজনে ভর্তির সময়সীমা বাড়ানো হবে। সব শিক্ষার্থীই ভর্তির সুযোগ পাবে।
উল্লেখ্য, দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জুন ২০১৮ সালের জারিকৃত পরিপত্রটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
এরপর থেকেই সারা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন। কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে নানা স্থানে বিক্ষোভ করেন কোটাবিরোধীরা। ঢাবি ছাড়াও বিক্ষোভ হয় জাবি, জবি, রাবি, সাত কলেজসহ দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন কলেজে।
এরমধ্যে গত মঙ্গলবার দিনব্যাপী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ছয়জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় দুজন ও রংপুরে একজন রয়েছেন।
এদিকে পরিস্থিতির যেন আরও অবনতি না হয় সে জন্য দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিতে উপাচার্যদের চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। পাশাপাশি সব আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে ক্যাম্পাসেই অবস্থান করছেন আন্দোলনকারীরা। এ নিয়ে বুধবার দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন ক্যাম্পাসে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন তারা। এতে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অনেকেই আহত হয়েছেন।
মন্তব্য করুন