সারা দেশের গরুর খামারিদের নিয়ে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন। গরু পাচারের প্রতিবাদের জেরে ২০১৯ সাল থেকে অন্য সদস্যদের সঙ্গে ইমরানের দূরত্ব তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করলে সংগঠনের নেতাদের নামে আইসিটি আইনে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন আলোচিত ‘সাদেক এগ্রো’-র মালিক মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন।
তবে আদালতে সেই মামলা বাতিল হয়ে যায়। এরপর সারা দেশের ডেইরি ফারমারদের নিয়ে সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠন করা হলে কমিটির নেতৃত্বস্থানীয় ১৬ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দেন ইমরান।
চট্টগ্রাম ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মালিক ওমর কালবেলাকে বলেন, ‘তার সঙ্গে আমাদের মূলত বিরোধ বাধে ব্রাহমা জাতের গরুর ব্যবসা নিয়ে। আমরা তাকে বলি, আপনি হয় ব্রাহমা গরুর ব্যবসা করেন, না হয় সংগঠন করেন। তিনি দুইটাই করতে চান। কারণ সংগঠনের সভাপতি হিসেবে তার জন্য অবৈধভাবে ব্রাহমা জাতের গরুরু ব্যাবসা করা সহজ।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইমরান আগে বিমানবন্দর দিয়ে গরু আনত। ২০২১ সালে তার চালান ধরা পড়ার পরে আর বিমানবন্দর দিয়ে গরু আনেন না। এখন আমেরিকা থেকে গরু প্রথমে থাইল্যান্ডে আনেন। এরপর সেখান থেকে বর্ডার দিয়ে চোরাইপথে বাংলাদেশে এনে বিক্রি করেন।’
কালবেলার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ‘সাদেক এগ্রো’-র মালিক শাহ ইমরান হোসেন দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে রাজধানী পর্যন্ত বিস্তার করেছেন গরু চোরাচালানের সিন্ডিকেট। ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চোরাইপথে নানা জাতের গরু আনা হয়। সেজন্য স্তরে স্তরে রাখা হয় দালাল।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে গরু রাখার গোপন ডেরা। ঢাকার বছিলায় খাল দখল করে গড়ে তুলেছেন এগ্রো ফার্ম। প্রয়োজনে ব্যবহার করেন তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, আমলা এবং ব্যবসায়ীদের।
এ খাতের অনিয়ম দেখার দায়িত্বে থাকা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরও তার হাতের মুঠোয়। কথামতো না চললে অন্য খামারিদের বিরুদ্ধে যখন তখন মামলা ঠুকে দেন। দাপট দেখিয়ে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পদও দখলে নিয়েছেন মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন। কালবেলার দীর্ঘ অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে রাজধানীর উপকণ্ঠ বছিলায় মাত্র কয়েকটি গরু নিয়ে যাত্রা শুরু হয় সাদেক এগ্রোর। তবে কয়েক বছরের মধ্যেই ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে ব্যবসার। তখন থেকেই প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে শুরু করেন ইমরান। আর সেই সুবাদেই জড়িয়ে পড়েন গরু চোরাচালানের সঙ্গে। অল্প টাকায় ভারত থেকে গরু এনে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেন। এ ছাড়া থাইল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আনেন উন্নত জাতের গরু।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালানের রুট নিয়ন্ত্রণ করেন মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন। থাইল্যান্ড থেকে উন্নত জাতের গরু মিয়ানমার হয়ে উখিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর নেপথ্যে ভূমিকা রাখেন ইমরান।
মন্তব্য করুন