ভারতে ‘চিকিৎসা’ করাতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। একসময়ের বাল্যবন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীনের পরিকল্পনায় তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বে দেন ভাড়াটে খুনি ও চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ। তার সঙ্গে আরও চারজন হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাবার মৃত্যুতে মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাবাকে নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে আবেগঘন পোস্ট করেন। এর আগে গতকাল বুধবার (২২ মে) রাত ১০টায় আরও একটি পোস্ট করেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে ডরিন লিখেছেন, ‘আব্বু তোমার অনেক কষ্ট হয়েছিল তাই না? তুমি তো আমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলে, আমিই যাইনি। ভিসা ছিল না আমার। আমি তোমার কষ্টের ভাগ নিতে পারলাম না। তুমি কত কষ্ট পেয়েছ, এটা ভাবলে আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছা শেষ। আমি তোমার এত আঘাত-ব্যথা সহ্য করতে পারি না। আল্লাহ কি নেই? এত কষ্ট দিয়ে কোনো মানুষ মানুষকে মারতে পারে বলে আমার জানা ছিল না। আমি বিচার চাই, আমি বিচার চাই। আমি ওদের লাশ দেখতে চাই নির্মমভাবে।’
বৃহস্পতিবার সকালের পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি আব্বু ডাকতে পারি না। আমি তো এতিম। তুমি কি দেখতেছো আব্বু?’
এ ছাড়া বুধবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে এক স্ট্যাটাসে ডরিন লিখেছিলেন, ‘আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, ধৈর্য ধরো বিচার হবে।’
গতকাল বুধবার ডিবি কার্যালয়ে বাবা হত্যার বিচার দাবি করে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন মুনতারিন ফেরদৌস ডরিন।
কান্নারত অবস্থায় তিনি বলেন, এই হত্যা কারা করেছে কেন করেছে আমি এটা জানতে চাই, তাদের ফাঁসি চাই, আমি এতিম হয়ে গেছি। আমার পড়াশোনা শেষ হয়নি। বাবার মতো কেউ হয় না। যতই আত্মীয়স্বজন থাকুক। আমি স্বচক্ষে হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখতে চাই।
এ ঘটনায় জড়িত কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের চেনেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তাদের চিনি না। কিন্তু আমি তাদের চিনতে চাই।
তিনি বলেন, সর্বশেষ আমি ভিডিও কলে বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, ইন্ডিয়া যাচ্ছি, কয়েকদিন পর চলে আসব। কিন্তু আর আসেননি। আমি এই ঘটনার কোনো কিছুই জানি না। তবে আমি সব জানতে চাই। কেন মারল আমার বাবাকে। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
জানা গেছে ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজিমের মরদেহ কলকাতার নিউ টাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (২২ মে) কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টিভি নাইন বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১২ মে কলকাতায় যান আজিম। একজন অফিসারের ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন আরও তিনজন। বরানগর এলাকার সিঁথিতে যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন আজিম তার নাম গোপাল বিশ্বাস।
গত ১৩ মে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভাড়া করা গাড়িতে ওঠেন আজিম। তারপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন