ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইএইউ) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ একেকটি মাদ্রাসা পরিদর্শনে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া-বিধিবর্হিভূতভাবে গাড়ির জ্বালানি ব্যবহার, রোহিঙ্গাদের অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণসহ নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) উপ-উপাচার্য আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ৯৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ ও এর প্রমাণ জমা পড়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, উপ-উপাচার্য মাদ্রাসা অধিভুক্তি ও নবায়নে পরিদর্শনে গেলে গড় হিসেবে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নেন। আর প্রাথমিক পাঠদানের অনুমোদনের জন্য গেলে নেন এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগে প্রতিনিধি হিসেবে গেলেও তাকে এক লাখ টাকার নিচে দিলে নেন না। এ ছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও টিএ/ডিএ নেন।
এতে বলা হয়েছে, আবুল কালাম আজাদ যোগদানের মোট ৭২০ দিনের মধ্যে ৪০০ দিন অফিস করেছেন। বাকি ৩২০ দিনে তিনি প্রায় চার ৪০০ এর বেশি মাদ্রাসায় পরিদর্শন, অধিভুক্তি, প্রাথমিক পাঠদান, নবায়ন, তদন্ত, নিয়োগ প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন কাজে গিয়েছেন।
ইউজিসিতে জমা পড়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ছাত্রজীবনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন। তার বাবাসহ পুরো পরিবারের সবাই মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিলেন। জোট সরকারের আমলে আবুল কালাম আজাদের চাকরি হয়। তার চাকরির সুপারিশদাতা ছিলেন যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রান্ত আসামি মতিউর রহমান নিযামী।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বিভিন্ন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগে প্রতিনিধি হিসেবে নিজেই নিজের নামে চিঠি ইস্যু করেন। বরিশালের বাঘিয়া আল আমিন কামিল মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগে বড় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। সেখান থেকে তিনি বড় অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের খোশবাজার ছালেহিয়া দারুচ্ছুন্নাত কামিল মাদ্রাসার নিয়োগ প্রতিনিধি হিসেবে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি ঢাকায় কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগসাজশে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে তিনি ওই মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেন। পটুয়াখালীর ‘দুমকী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা’র গভর্নিং বডি অনুমোদন নিয়ে মামলা থাকার পরও তিনি তা অনুমোদন দেন। রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার পাইকান আকবরিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসা পরিদর্শনে নিজেই নিজের চিঠি অনুমোদন করেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ২০০ লিটার পর্যন্ত জ্বালানি তেল ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু তিনি অনেক মাসেই সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ লিটার পর্যন্ত জ্বালানি তেল নেন। তার বাসা থেকে অফিসের দূরুত্ব ১৫ কিলোমিটার হলেও তিনি তা দেখান ১৫০ কিলোমিটার। এ ব্যাপারে তার ড্রাইভারকে শোকজও করা হয়েছে। এ ছাড়া তার জন্য বরাদ্দকৃত ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-৫৩১৬ গাড়ি থাকার পরও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবাসও প্রায় সময়ই ব্যবহার করেন।
ইউজিসিতে জমা দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, অধ্যাপক আজাদ যোগদানের পর থেকে এক বছর ১০ মাসে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৭৯ লাখ ১০ হাজার ৮৪৭ টাকা জমা হয়েছে। অথচ তিনি এই সময়ে বেতন-ভাতা পেয়েছেন ২৫ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭০ টাকা। তার শেয়ার বাজারে বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে। তার ও স্ত্রীর নামে লাখ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, আবুল কালাম আজাদ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হওয়া সত্ত্বেও ‘ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম’ নামে একটি সংস্থা নিয়মিতভাবে পরিচালনা করছেন। আর এ কাজেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িসহ নানাকিছু ব্যবহার করছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য আবুল কালাম আজাদ ইলেকশন মনিটরিং ফোরামে যুক্ত থাকা ছাড়া বাকি সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, মাদ্রাসা পরিদর্শনসহ কোনো ক্ষেত্রেই আমি টাকা নেইনি। এটি চ্যালেঞ্জ করতে পারব।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে বেনামে ভুয়া অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। আমি এসবের পরোয়াও করি না। তবে চাই সত্য ঘটনা যাতে সামনে আসে।