রাশিয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় অনলাইন জুয়ার একাধিক সাইট। শরীয়তপুরের মতিউর রহমান রাশিয়ার মস্কোতে থাকেন। সেখান থেকেই তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন মেল বেট, ওয়ান এক্স বেট ও বেট উইনার নামের তিনটি অনলাইন জুয়ার সাইট। দেশে নিয়োগ দেওয়া হয় এর ম্যানেজার।
প্রতি মাসে তারা জুয়াড়িদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। পরে এ দেশে থাকা ম্যানেজার ও এজেন্টরা সেগুলো ভার্চুয়াল মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে রূপান্তর করে মস্কো পাঠান।
এসব ম্যানেজার জুয়ার টাকা সংগ্রহ করে মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেন। অনলাইনে জুয়ার মাধ্যমে টাকা পাচারের অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্টের একটি দল গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মোহাম্মদপুর, বনশ্রী ও আগারগাঁও এবং সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. রেজাউল করিম (৩১), মো. সৈকত রহমান (৩০), মো. সাদিকুল ইসলাম (২৮), নাজমুল আহসান (৩০), মো. তৌহিদ হোসেন (২৫) ও মো. জাকির হোসেন (৩৪)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ১৭টি মোবাইল ফোন, ২১টি সিম, ৪টি ল্যাপটপ, ৭টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, ২টি ট্যাব ও নগদ প্রায় ৪ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে।
আজাদ রহমান জানান, নিয়মিত মনিটরিংকালে অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম মেল বেট, ওয়ান এক্স বেট ও বেট উইনার নামক তিনটি সাইট পাওয়া যায়।
সিআইডি জানায়, এসব অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট রাশিয়া থেকে মূলত নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য ম্যানেজার নিয়োগ করা হয়।
গ্রেপ্তার রেজাউল করিম এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করতে তার বাসায় ৭টি কম্পিউটার ও ৪টি ল্যাপটপ নিয়ে টেকনিক্যালি দক্ষ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আইটি ল্যাব তৈরি করে। জুয়ার টাকা লেনদেনের জন্য তাদের সঙ্গে যুক্ত হন গ্রেপ্তার সাদিকুল ও জাকির হোসেনের মতো মোবাইলে অর্থসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের (এমএফএস) এজেন্ট। গ্রেপ্তার নাজমুল ও তৌহিদদের মতো এমএফএস ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের কিছু অসাধু কর্মচারীর সহযোগিতায় এই চক্র এজেন্ট সিম সংগ্রহ করতে। যাতে অনলাইন জুয়ার কাজগুলো নির্বিঘ্নে পরিচালনা করতে পারে।
চক্রটি ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে জানিয়েছে সিআইডি। গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিআইডি বলছে, রাশিয়ার মস্কোতে অবস্থান করা শরীয়তপুরের মতিউর রহমান মূলত এই সাইটগুলোর বাংলাদেশের দায়িত্বে রয়েছেন। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন যশোরের আশিকুর রহমান। এই দুজন এবং গ্রেপ্তার সৈকত ও রেজাউল এই চারজনের সমন্বয়ে বাংলাদেশে এ তিনটি ওয়েবসাইটের নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
মন্তব্য করুন