ডিবি পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতির সঙ্গে জড়িত যুবলীগের এক নেতাসহ ডাকাত চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। রোববার (০৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ও ভোরে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান রমনা জোনের ডিসি মো. মাসুদ আলম।
ডাকাত দলের ১২ সদস্যের মধ্যে একজনের নাম বেলাল চাকলাদার। তিনি যুবলীগের নেতা। রাজধানীর মতিঝিল ১৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য ও বরিশালের মুলাদী উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২টি হত্যা মামলাসহ ডাকাতির মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলো- মো. মঞ্জু (৪০), সাইফুল ইসলাম (৪০), মো. রাসেল (২৮), মো. জাহিদ (২৪), মো. জাকির প্রকাশ তৌহিদ (৪০), মো. ইসমাইল হোসেন (৩৩), মো. হিরা শেখ (৩৫), মো. রফিক (৩৫), মো. বাধন (৩০), চাঁন মিয়া (৫৪), বেল্লাল চাকলাদার (৪৫) ও মো. আসলাম খাঁন (৪৫)।
ধানমন্ডি থানা সূত্রে জানা গেছে, মো. আব্দুল কাদের পেশায় একজন ট্রাক ব্যবসায়ী। তার মালিকানাধীন চারটি ট্রাক রয়েছে। গত ২ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭ টায় তার ট্রাক ড্রাইভার মো. নয়ন ও হেলপার মো. জামিরুল ইসলাম পাম অয়েল বোঝাই ৬০টি ড্রাম ট্রাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার উদ্দেশে রওনা করে। পথিমধ্যে গত ৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৩ টায় ধানমন্ডি মডেল থানাধীন মিরপুর রোডস্থ হোটেল আড্ডার সামনে ৭-৮ জনের একটি ডাকাত দল দুটি মাইক্রোবাসে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গতিরোধ করে সিগন্যাল দিয়ে ট্রাকটি আটকায়। অতঃপর মাইক্রোবাস থেকে দুই ব্যক্তি লেজার লাইট ও ওয়াকিটকিসহ সাদা পোশাকে নেমে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকের কাগজপত্র দেখতে চায়। তারপর জোর করে পিস্তল ঠেকিয়ে ড্রাইভার হেলপারসহ তেলবাহী ট্রাকটি নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়। পরে ড্রাইভার ও হেলপারকে চেতনা নাশক ঔষধ খাইয়ে হাত ও চোখ বেঁধে কেরানীগঞ্জের রসুলপুর এলাকায় ফেলে দেয়।
এ ঘটনার ট্রাক ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বাদী হয়ে গত ৭ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় একটি ডাকাতির মামলা করেন।
ওই মামলার ঘটনার ১৯ দিন পর গত ২২ জানুয়ারি রাত ৩ টার সময় একই কায়দায় ডাকাত দল মোহাম্মদপুর থানাধীন রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গেটের সামনে থেকে ৭৫ ড্রাম সয়াবিন তেল বোঝাই একটি ট্রাক ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করা হয়।
মামলা তদন্তকালে ধানমন্ডি মডেল থানা গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় জড়িতদের অবস্থান শনাক্ত করে। এরপর গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর মগবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. মঞ্জু, সাইফুল ইসলাম, মো. রাসেল ও জাহিদকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৯ ফেব্রুয়ারি ডাকাতির মূল হোতা মো. জাকির প্রকাশ তৌহিদকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ আরশি নগর থেকে, মো. ইসমাইল হোসেন, মো. হিরা শেখ, মো. রফিককে ঢাকা কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে, মো. বাধনকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ পানগাঁও থেকে, চাঁন মিয়াকে মহাখালী এলাকা থেকে, বেল্লাল চাকলাদারকে ঢাকার শনির আখড়া থেকে এবং মো. আসলাম খাঁনকে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরবর্তীতে গ্রেপ্তার মো. আসলাম খাঁনের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে তার মুন্সিগঞ্জের বিসিক এলাকার গোডাউন থেকে ১০টি তেল ভর্তি ড্রাম যার ওজন ১ হাজার ৮৫০ কেজি ও বাজার মূল্য আনুমানিক দুই লাখ ৯৬ হাজার টাকা এবং ৩৬টি খালি তেলের ড্রাম উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। এছাড়াও গ্রেপ্তারদের হেফাজত থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা নোহা গাড়ি, একাধিক বাটন ফোন ও একটি লুন্ঠিত ট্রাক উদ্ধার করা হয়।
থানা সূত্রে আরও জানা গেছে, গ্রেপ্তাররা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ডাকাতদলের মূল হোতা মো. জাকির প্রকাশ তৌহিদের বিরুদ্ধে ১০টি, মো. জাহিদের বিরুদ্ধে আটটি, মো. হিরা শেখ ও রফিকের বিরুদ্ধে ছয়টি করে, মো. মঞ্জুরের বিরুদ্ধে পাঁচটি, মো. চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে চারটি ও মো. বেল্লাল চাকলাদারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তাররা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করে আসছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। তাদের বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়। ডাকাতির আগে তারা নিদিষ্ট জায়গায় একত্রিত হয়। তারা ডাকাতির সময় সাধারণত বাটন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। পরবর্তীতে ডাকাতি শেষে মোবাইল ফোন সীমসহ ফেলে দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যায়।
মন্তব্য করুন