বিদেশে পালিয়ে যেতে বিমানবন্দরে গিয়ে আটক হয়েছেন চট্টগ্রামের ‘সোনা চোরাচালানে’ অভিযুক্ত আবু আহমেদ ওরফে সোনা আবু। গতকাল রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
আবু আহমেদকে চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার পুলিশ ঢাকা থেকে আজ সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নিয়ে আসে।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক আহমেদ একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ডবলমুরিং থানার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আবু আহমেদ। তিনি বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছেন খবর পেয়ে বিমানবন্দরে তাকে আটকানো হয়। পরে ডবলমুরিং থানার মামলায় আজ বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
আবু আহমেদের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। ১৯৯১ সালে শ্রমিক ভিসা নিয়ে দুবাই যান তিনি। বিদেশ যাওয়ার আগে দেশে মুড়ি বিক্রি করলেও সেখানে গিয়ে বনে যান সোনা চোরাচালানি ও হুন্ডি কারবারি। বছরখানেক আগে সিআইডি ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট আবু আহমেদের ৭২১ কোটি ১৭ লাখ টাকার সম্পদের খোঁজ পায়।
তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানার মামলায় সিআইডি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় আদালতে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আবু আহমেদ চট্টগ্রামে অর্থ পাচার এবং সোনা ও অন্যান্য পণ্য চোরাচালানের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি ভবন, প্লট ও বিলাসবহুল বাড়ি। দুবাইয়েও তার তিনটি দোকান রয়েছে।
সিআইডির তদন্তে প্রমাণ মিলেছে, আবু আহমেদ ফরহাদ ট্রেডিং, রিয়াল ট্রেডিং, নাইস টেলিকম সেন্টার, রুপা টেলিকমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ২১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন, যাতে লেনদেন হয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা।
২০১৩ সালের ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের হিলভিউ আবাসিক এলাকার বাসার সামনে থেকে হঠাৎ অপহৃত হন আবু। তখনই প্রথম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে উঠে আসে আবু নামের রহস্যময় এক বিত্তশালীর নাম। প্রায় ১০ বছর আগের সেই অপহরণের ঘটনায় আবু এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান অজ্ঞাত একদল দুর্বৃত্তের হাত থেকে। ঘটনার পাঁচ মাস পর ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করার পর অপহরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে সোনা চোরাচালানের হোতা হিসেবে আবুর নাম প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৪ সালে। ওই বছর ঢাকায় চোরাচালানের সোনা উদ্ধারের পরপর তিনটি ঘটনায় দৃশ্যপটে চলে আসেন আবু। এর মধ্যে ১০৫ কেজি ওজনের সোনার প্রথম চালানটি ধরা পড়ে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। পরে একই বিমানবন্দরে ৫২৫টি সোনার বারসহ ধরা পড়ে বিপুল পরিমাণ সৌদি মুদ্রার অপর একটি চালান। ৬১ কেজি সোনাসহ আরেকটি চালান ধরা পড়ে ঢাকার নয়াপল্টন থেকে। এসব ঘটনায় ঢাকা বিমানবন্দর থানা ও পল্টন থানায় আবুর বিরুদ্ধে মামলা হয়।
এরপর ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারের বাহার মার্কেট থেকে বর্তমানে স্ত্রী খুনের মামলায় আলোচিত তৎকালীন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে উদ্ধার করা হয় তিনটি সিন্দুকভর্তি বিপুল পরিমাণ সোনা ও টাকা। এর মধ্যে একটি সিন্দুক থেকে ২৫০টি সোনার বার এবং অন্য এক সিন্দুকে পাওয়া যায় ৬০ লাখ টাকা।
এ ঘটনায় আবু ও তার ম্যানেজার এনামুল হককে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। এ মামলায় গ্রেপ্তারের পাঁচ মাসের মাথায় ২০১৬ সালের আগস্টে কারাগার থেকে বেরিয়ে যান তিনি।
মন্তব্য করুন