শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যুবলীগ নেতা হৃদয় ভোল পাল্টে এখন বড় বিএনপি!

হৃদয় ব্যাপারী। ছবি : সংগৃহীত
হৃদয় ব্যাপারী। ছবি : সংগৃহীত

মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত-সমালোচিত বগুড়া সদর উপজেলার যুবলীগ নেতা হৃদয় ব্যাপারী। ৫ই আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটেছে, কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কমেনি। সম্প্রতি ভোল বদলে বিএনপির সঙ্গে মিলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

স্থানীয়রা জানান, কিশোর বয়স থেকেই অপরাধে হাত পাকান হৃদয় ব্যাপারী। এরপর একে একে নানা অপরাধে যুক্ত হন তিনি। ২০০৮ সালে তার পরিবারের সদস্যদের নাম আসে আলোচিত সুমন দাশ হত্যা মামলায়। ওই মামলা টাকার বিনিময়ে আপসের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মামলায় নাম ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ও নারুলি ফাড়ির কিছু অসাধু সদস্যের সহযোগিতায় হৃদয় স্থানীয়দের বিভিন্নভাবে মামলা-হামলার হুমকি দিয়ে মামলা বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

সূত্র বলছে, এক সময় বগুড়া জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশিস পোদ্দার লিটনের নিজস্ব বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন হৃদয় ব্যাপারী। এরই পুরষ্কার স্বরুপ বগুড়া সদর যুবলীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। সখ্যতা ছিল বগুড়া সদর আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি রাগেবুল হাসান রিপুর সঙ্গেও।

বগুড়া সদরের উত্তর চেলোপাড়ার বাসিন্দারা বলছেন, হৃদয় দীর্ঘ দিন ধরেই এলাকাবাসীকে হয়রানি করে আসছেন। ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, চাঁদাবাজিসহ নানাভাবে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছেন তিনি। তবে তার ভয়ে স্থানীয়রা মুখ খুলছেন না। তিনি বগুড়া সদরের উত্তর চেলোপাড়া এলাকার মৃত আলম ব্যাপারীর ছেলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চেলোপাড়ার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, হৃদয়ের অত্যাচারে এলাকায় থাকা দায় হয়ে পড়েছে। সে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও আমাদের জ্বালিয়ে খেয়েছে, এখন আবার নিজের খোলস পাল্টে বিএনপির সঙ্গে মিশে গিয়ে আমাদের আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। অবৈধ উপায়ে অর্জিত তার অঢেল সম্পত্তি ও টাকা পয়সা রয়েছে। এসব টাকা পয়সা বিভিন্ন পর্যায়ের গুন্ডা পান্ডা এবং নেতাদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে নিজেই এখন অঘোষিত সম্রাটে পরিণত হয়েছে। থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে সে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। আমরা তার অত্যাচার থেকে মুক্তি চাই।

এদিকে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রীতিমতো ভোল বদলেছেন হৃদয় ব্যাপারী। সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিলে হৃদয় ব্যাপারীও সেই সময় রাতারাতি হাওয়া হয়ে যান। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি আবারও অবাধে পুরনো অপরাধ কার্যক্রম চালু করেছেন।

সূত্র বলছে, বগুড়া জেলা শহরে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এক নেতার বাসায় অবাধে যাতায়াত বেড়েছে হৃদয় ব্যাপারীর। সেই নেতার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে আবারও সক্রিয় হয়েছেন তিনি। বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে ছবি উঠিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকে বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত করানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেন, হৃদয় ব্যাপারী আগে যুবলীগ করতো। এখন বিএনপির সঙ্গে মিশে গেছে। সে আবারও চাঁদাবাজি, হয়রানিসহ সব কর্মকাণ্ড চালু করেছে। তার মায়ের রয়েছে বিশাল সুদের কারবার। লাখে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা প্রফিটে দেওয়া হয় সুদের টাকা। কেউ সঠিক সময়ে সুদের টাকা পরিশোধ না করতে পারলে তার উপর নেমে আসে নির্যাতন।

জানুয়ারির প্রথম দিকে, বগুড়ার নিউমার্কেট এলাকার ক্রোকারিজ ব্যাবসায়ী ইব্রাহিমকে দল বল নিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ১৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় হৃদয় বাহিনী। ইব্রাহিম, হৃদয় এবং তার মায়ের কাছ থেকে মাত্র পাঁচ লাখ টাকা সুদ হিসেবে নিয়েছিল কয়েক বছর আগে। সেই টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এমন কান্ড ঘটান হৃদয়। ১৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে হৃদয় এলিয়েন গাড়ি কিনে দাপিয়ে বেরাচ্ছে গোটা এলাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ভুক্তভোগী কালবেলাকে বলেন, সুদের টাকা নিয়ে সময় মতো পরিশোধ করতে না পারায় তাকে মারধর সহ শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল। এসব ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে ও হৃদয় ব্যাপারীকে যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে স্থানীয় প্রশাসন ও বিএনপির হাইকমান্ডের নজর দেওয়ার দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

এসব বিষয়ে হৃদয় ব্যাপারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল ধরেননি। এছাড়া মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাহ বলেন, এ রকম বিষয় আমার জানা নেই। তবে চাঁদাবাজি-গুন্ডামিতে যেই জড়িত থাকুন না কেনো, তার বিরুদ্ধে দলীয় এবং আইনগত উভয়ভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ায় দলীয় ১২ জনকে বহিস্কার করা হয়েছে। আর ফ্যাসিস্টদের দল থেকে সনুযোগ-সন্ধানী কেউ এসে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে গুন্ডামি-চাঁদাবাজি করলে সেও রেহাই পাবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নির্বিঘ্নে সভা—সমাবেশ করার অধিকার চায় সনাতনী জাগরণ জোট

‘তোরা সমন্বয়ক’ বলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলা

নরসিংদীতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ইউপি সদস্য আহত

চাপের মুখে হাতকড়া পরলেন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী

রাজবাড়ী জেলা বারের সভাপতি বাচ্চু, সম্পাদক রাজ্জাক

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নামে মিয়ানমারের ভিডিও প্রচার

মেঘনা নদীতে দুগ্রুপের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ২

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন

বনের জমি উদ্ধার করতে গিয়ে আহত ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী

ভারতে পাচার ১৬ কিশোর-কিশোরীকে বেনাপোলে হস্তান্তর

১০

গাউসুল আজম মার্কেটে অস্থিরতার চেষ্টা, অভিযোগ ব্যবসায়ীদের

১১

বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে যা জানাল র‍্যাব

১২

অসম্মান-মানসিক চাপে বিদ্রোহের সুর, কাঁদলেন নারী ফুটবলাররা

১৩

আন্দোলনের মুখে পঞ্চগড়ের চার বিচারকের বদলি

১৪

ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করতে কমিটি

১৫

জায়গার মালিকানা নিয়ে হামলা, নারীসহ আহত ৫

১৬

জমি নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১৫

১৭

কবরস্থানের সীমানা নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ, নিহত ১

১৮

বাংলাদেশে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি জাপানের 

১৯

শরিফুলের আগুন বোলিংয়ে চিটাগাংয়ের বড় জয়

২০
X