চাকরি ও বিয়ের ফাঁদে ফেলে চীনে নারী পাচার করার অভিযোগে মানব পাচারকারী চক্রের দুই চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন।
গ্রেপ্তার চীনা নাগরিকরা হলেন- ফ্যান গোউয়ে (২৭) ও ইয়াং জিকু (২৫)।
চাঁদপুর জেলার সুবর্ণা আক্তার (২১) নামের এক ভুক্তভোগীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি প্রথমে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের নজরে আসে। গত সোমবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাচারকালে তিনি পালিয়ে এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে চলে আসেন এবং জানান ফ্যান গোউয়ে একজন চীনা নাগরিক, তাকে চীনে পাচারের চেষ্টা করছে। যে বর্তমানে চীন যাবার উদ্দেশে এয়ারপোর্টে অবস্থান করছে।
এপিবিএন জানিয়েছে, অভিযোগকারীর তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনিতা রানী সূত্রধর তার সহযোগী ফোর্সসহ বোর্ডিং লাউঞ্জ-৫ এ অভিযুক্ত চীনা নাগরিককে অভিযোগকারীর সহায়তায় শনাক্ত এবং আটক করেন। পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন থেকে অফলোড করে অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত দুজনকেই এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযুক্তের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে ও ভুক্তভোগীর দেওয়া তথ্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, নিকুঞ্জের একটি তিন তলা বাড়িতে আরও দেশি-বিদেশি পাচারকারী ও নারী ভুক্তভোগী অবস্থান করছে। এই তথ্য অনুসারে সোমবার গভীর রাতে সিআইডির টিএইচবি সেল, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা ও এয়ারপোর্ট এপিবিএনের একটি চৌকশ দল নিকুঞ্জের সেই বাড়িতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। সেখান থেকে তারা ইয়াং জিকু নামক আরেকজন চীনা পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাকিরা পালিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ পাচারকারী চক্রের গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
এপিবিএন জানিয়েছে, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মানব পাচারের সাথে যুক্ত বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গত ২ বছর পূর্বে টিপু এবং জিহাদ নামে দুজনের সঙ্গে ভুক্তভোগীর ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয়। তাদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথা হতো। কথাবার্তার এক পর্যায়ে জিহাদ তাকে চাইনিজ কোম্পানিতে চাকরির প্রস্তাব দেয়। তার প্রস্তাবে রাজি হলে টিপু এবং জিহাদ গত অক্টোবরের ২৬ তারিখ ভিকটিমের নিজ বাড়ি থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। টিপু এবং জিহাদ ভুক্তভোগীকে ঢাকায় নিকুঞ্জ-১ এর একটি বাড়িতে নূরু নামের এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে নূরু ইয়াং হও নামে একজন চীনা নাগরিকের সঙ্গে ভুক্তভোগীর বিবাহের নাটক সাজায়।
২৬ অক্টোবর ইয়াং হও-এর সঙ্গে ভুয়া বিবাহ সম্পন্ন হয়। ভুয়া বিবাহের পর তারা উল্লিখিত নিকুঞ্জের বাড়িতে বসবাস শুরু করে। ওই বাড়িতে আরও ৭-৮ চীনা ব্যক্তি ও আরও নারীকে দেখেছেন বলে ভুক্তভোগী জানান। এর মধ্যে পাচারকারী চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীর পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র প্রস্তুত করে এবং ভুক্তভোগীকে নিকুঞ্জের বাসায় আটকে রাখে। ভুক্তভোগীকে এ সময়ে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। গত সপ্তাহে ভুক্তভোগীর কথিত স্বামী ইয়াং হও চীনে চলে যায়। পরবর্তীতে পাচারকারী চক্রের সদস্য ফ্যান গুয়াই ফ্লাইটে পাচার করার জন্য গত ৯ ডিসেম্বর ভুক্তভোগীকে জোর করে বাসা থেকে হজরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে যায়। বিমানবন্দরে নিয়ে ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সেটিংসের ভাষা চায়নিজ ভাষায় রূপান্তর করে ফেরত দেয়।
এপিবিএন জানায়, বিমানবন্দরে সুযোগ বুঝে পালিয়ে ভুক্তভোগী নারী এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে সাহায্য চাইলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ত্বরিত ব্যবস্থা নেন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার এডিশনাল ডিআইজি শিহাব কায়সার খান বলেন, বেশ কিছু দেশের মানব পাচারকারী চক্র স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় নারী পাচারের চেষ্টায় লিপ্ত। তারা মূলত গ্রামের সহজ-সরল নারীদের টার্গেট করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করার চেষ্টা করে। তথ্য পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করি। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। মানব পাচার ঠেকাতে সবার সতর্ক থাকার বিকল্প নেই বলে মতামত দেন তিনি।
মন্তব্য করুন