মাত্র চার মাস আগে বিয়ে করেছিলেন জাররাফ আহমেদ প্রীতম (৩০)। বিয়ের পরপরই উচ্চতর পড়াশোনার জন্য অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান তার স্ত্রী। কয়েকদিন পর তারও চলে যাওয়ার কথা।
কিন্তু উচ্চতর শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না প্রীতমের। গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে বাসায় যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান তিনি।
সোমবার (২৬ আগস্ট) ভোর রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকার দারুস সালাম সড়কে রিকশার গতিরোধ করে প্রীতমকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
দারুস সালাম রোডের মিরপুর টাওয়ারের দক্ষিণ পাশে টয় পার্কের সামনে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। খুনের পর তার কাছে থাকা একটি ম্যাকবুক, মোবাইলফোনসহ নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে।
নিহত প্রীতমের গ্রামের বাড়ি নওগাঁর নজিপুর গ্রামে। তার বাবার নাম বদরুজ্জামান। তিনি রাজধানীর একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে জেষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এ ঘটনায় বাদী হয়ে নিহতের চাচাতো বোন কানিজ শারমিন দারুস সালাম থানায় একটি মামলা করেছেন।
মামলার বাদী কানিজ শারমিন অভিযোগে লিখেছেন, গত সোমবার ভোর এসে আমার চাচাতো ভাই জাররাফ আহমেদ প্রিতম তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ থেকে এসে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে নামেন। সেখান থেকে তার পল্লবীর ভাড়া বাসায় যাওয়া জন্য একটি রিকশা নিয়ে রওনা দেন।
আনুমানিক ভোর ৫টার দিকে দারুস সালাম রোডের মিরপুর টাওয়ারের দক্ষিণ পাশে টয় পার্কের সামনে অজ্ঞাতনামা দুই ছিনতাইকারী চাকু বের করে তার গতিরোধ করে। এরপর তার কাছে থাকা মোবাইল, ল্যাপটপ ও নগদ টাকা নেওয়ার জন্য জোর জবরদস্তি করে। তখন প্রীতম বাধা দিলে ওই দুই ছিনতাইকারী তার বুকে, উড়ুতে ও পায়ে ধারালো চাকু দিয়ে উপর্যুপুরি আঘাত করে। এরপর তার কাছে থাকা প্রায় পনেরো হাজার টাকা দামের মোবাইল, দুই লাখ টাকা দামের ম্যাকবুক ও পকেটে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
প্রীতমের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে একজন দোকান কর্মী ও পথচারি তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যায়।সেখানে সকাল সাতটার দিকে ডাক্তার প্রীতমকে মৃত ঘোষণা করেন। ধারণা করা হচ্ছে এই পুরো চক্রের সঙ্গে রিকশাচালকও জড়িত।
কানিজ শারমিন জানান, এ খবর তার বাবাকে দেওয়া হয়নি। কারণ তার বাবা কয়েকদিন আগে ওপেন হার্ট সার্জারি করেছেন। তার স্ত্রীকেও তারা খবরটি দিতে পারেননি।
নিহত প্রীতমের বন্ধু জাহিদ বলেন, আমরা মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সারাদিন প্রীতমকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছি। সন্ধ্যার দিকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তার লাশ সেখানে আছে। আমরা সব কিছু শেষ করে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার মরদেহ নিয়ে নওগাঁর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। মরদেহ প্রীতমের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে।
এ বিষয়ে দারুস সালাম থানার ওসি রকিব উল হোসেন বলেন, এই ঘটনায় একটা মামলা হয়েছে। আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি।
মন্তব্য করুন