ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুসহ তিনজন তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করলেও এ ঘটনায় তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
শনিবার (১৩ জুলাই) মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করা অন্য দুজন হলেন শিমুল ভূইঁয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূইঁয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ ও তানভীর ভূইঁয়া।
তিন আসামি জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চেয়েছেন। এতে মামলায় কোনো প্রভাব পড়বে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, আদালতে যে কেউ আবেদন করতে পারেন। আদালত গ্রহণও করতে পারেন, আবার বাতিলও করতে পারেন। এতে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে না।
তিনি বলেন, আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাতজনের মধ্যে ছয়জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া ভারতীয় পুলিশের কাছে দুজন আছেন।
ডিবিপ্রধান আরও বলেন, আগেও আমরা বলেছি অযথা কাউকে ডাকাডাকি করছি না। আবার এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত সে যত বড় নেতাই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আরও বেশ কয়েকজনের নাম আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে মাস্টারমাইন্ড দেশের বাইরে রয়েছে। সবকিছু মিলিয়েই তদন্ত কার্যক্রম চলছে। ভারতের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে আমাদের।
তিনি বলেন, এমপি আনারের ঘটনায় অবাধ ও সুষ্ঠু তদন্ত করছে ডিবি। তদন্তের প্রয়োজনে আমরা কলকাতা ও নেপালেও গিয়েছি। আদালতের অনুমতি নিয়ে গ্যাস বাবুকে সঙ্গে নিয়ে ঝিনাইদহের দুটি পুকুরে মোবাইল উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মালপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ ছিলেন আনোয়ারুল আজিম।
২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পাশের নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জিভা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বি-ইউ ৫৬ নম্বর রুমে খুন হয়েছেন এমপি আনার। এ ঘটনার পর ঢাকায় অপহরণ মামলা ও কলকাতায় হত্যা মামলা হয়েছে। ঢাকায় প্রথমে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান গ্রেপ্তার হন। তারা তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাদের তথ্যে গ্রেপ্তার হন কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু। তিনিও গতকাল ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
এদিকে কলকাতা সিআইডি মুম্বাই থেকে গ্রেপ্তার করেছে জিহাদ হাওলাদারকে আর নেপাল থেকে সিয়ামকে। এমপি আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও এমপির বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীনের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছেন ঢাকা ডিবি ও কলকাতা সিআইডির কর্মকর্তারা। তিনি এমপি আনার হত্যার পর দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়েছেন। তাকে ফিরিয়ে আনতে ভারত ও বাংলাদেশ একযোগে কাজ করছে।
মন্তব্য করুন