মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি (এমএলএম) ইউনিপে টু ইউর ব্র্যাক ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখার তিনটি হিসাবে জব্দ থাকা ৪২০ কোটি টাকা অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। দুদকের আপিল নিষ্পত্তি করে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) এ আদেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান, অন্যদিকে ভুক্তভোগী পাচঁ বিনিয়োগকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অনিক আর হক।
পরে আইনজীবী অনিক আর হক সাংবাদিকদের বলেন, ব্র্যাক ব্যাংক এলিফ্যান্ট শাখায় ইউনিপে টু ইউ’র ৪২০ কোটি টাকা জব্দ রয়েছে। আপিল বিভাগ নির্দেশ দিয়েছেন ওই টাকা সরকারি কোষাগারে স্থানান্তর করে, সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা বলা আছে সেটা দেবে। এরপর ইউনিপে টু ইউ’র গ্রাহক যারা আছেন তারা ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করবেন। তারপর তাদের আবেদন যাচাই বাছাই করে তারা সিদ্ধান্ত দেবে। তিনি বলেন, এ রায়ের ফলে গ্রাহকদের টাকা পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার অনীক বলেন, আমরা সর্বোচ্চ আদালতে বলেছি, আমরা ডিগ্রি পেয়েছি। তারপর এটিতে ক্রিমিনাল একটা মামলা হয়ে ক্রোক করার অর্ডার দিয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত দুদক বা সরকার এটাকে ক্রোক করেনি। সুতরাং আমাদেরকে কেন টাকা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে আইনের যে ধারা রয়েছে, সেই ধারাগুলো মেনে অবরুদ্ধ এই টাকাগুলো যেন আমাদের ফেরত দেওয়া হয়। আপিল বিভাগ আমাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে আপিল বিভাগ বলে দিলেন, হ্যাঁ অবরুদ্ধ এই টাকাটা সরকারি কোষাগারে নিয়ে আইনগত যারা গ্রাহক তাদের যেন ফেরত দেওয়া হয়।
গ্রাহকেরা টাকা কীভাবে পাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাকাগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাওয়ার পরে নির্দিষ্টভাবে আবেদন করতে হবে।
তবে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ইউনিপে টু ইউর হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে আমাদের আপিলটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। নিষ্পত্তির পাশাপাশি আদেশ দিয়েছেন, তবে কী আদেশ দিয়েছেন তা লিখিত রায়ের কপি পাওয়ার আগে কিছু বলা যাবে না।
জানা যায়, মো. মিজানুর রহমান, কাজী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মো. ফয়েজ উল্লাহ, মো. শহীদুল ইসলাম ও মো. মোস্তফা ভূঁইয়াসহ পাঁচ বিনিয়োগকারী ইউনিপে টু ইউ বাংলাদেশ লিমিটেড, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনতাছির হুসাইন ইমন, সিটি ব্যাংকের নিউমার্কেট শাখা, ব্র্যাক ব্যাংকের এলিফ্যান্ট শাখা, এনসিসি ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জের শাখার ব্যবস্থাপকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মানি স্যুট মামলা করেন। এ মামলায় ২০১৩ সালে ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালত সুদসহ মূল টাকা দিতে ৬-৮নং বিবাদীদের নির্দেশ দেন। আদালতের এ নির্দেশের পরও টাকা না পেয়ে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ একই আদালতে আদেশ কার্যকর চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তাদের আবেদনটি না মঞ্জুর করেন। পরে তারা এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন আবেদন করেন। হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই তাদের আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন। রুলে ঢাকা দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজের খারিজাদেশ কেন বাতিল করা হবে না এবং প্রাপ্ত ডিক্রি অনুযায়ী কেন কার্যকর করা হবে না জানতে চান। এ রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল যথাযথ ঘোষণা করেন। পরবর্তী হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করে দুদক। দুদকের আপিল নিষ্পত্তি করে মঙ্গলবার রায় দেন আপিল বিভাগ।
এর আগে দুদক ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি ইউনিপেটুইউ- এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করে। ওই মামলার রায়ে ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানি ইউনিপে টুইউ’র চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট ছয়জন কর্মকর্তাকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের ২৭০২ কোটি ৪১ লক্ষ ১১ হাজার ৭৮৪ টাকা ১৪ পয়সা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
রায়ে বলা হয়, তিনটি হিসাব নম্বরের বিপরীতে সর্বমোট ৪২০ কোটি ১৪ লাখ ২৯ হাজার ৬৬৩ টাকা জব্দ করা আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশের লাখ লাখ জনসাধারণের আমানতের একটি ক্ষুদ্র অংশ উক্ত অবরুদ্ধ টাকা। উক্ত টাকা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের শনাক্তক্রমে তাদের তালিকা প্রস্তুত করে ন্যায়সঙ্গতভাবে তা ফেরত দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
মন্তব্য করুন