ইয়াবার মামলায় দণ্ডিত মো. ইয়াকুব আজাদ নামে এক আসামির সাজা স্থগিত করে পবিত্র আল কোরআনের সুরা বাকারা, মায়েদা এবং নিছা ভালো করে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে ৫০টি গাছ লাগাতে এবং মাদ্রাসায় ভালোমানের কিছু ধর্মীয় বই উপহার দিতে বলা হয়েছে।
রোববার (৫ নভেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমামের আদালত মামলার সাজা স্থগিত করে এ আদেশ দেন। ওই আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর বিপুল চন্দ্র দেবনাথ এ রায়ের তথ্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আপিল শুনানিতে আইনজীবী জায়েদুর রহমানের মাধ্যমে আসামি প্রবেশন আইন অনুযায়ী দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। শুনানিকালে কাঠগড়ায় থাকা আসামির নিকট বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, আপনার (আসামি) ছেলেমেয়ে আছে? জবাবে আসামি জানান, এক ছেলে মাদ্রাসায় হাফেজি পড়ে, আর মেয়ে ছোট। তখন বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, ঘর পবিত্র করার জন্য ছেলেকে হাফেজি পড়াচ্ছেন, সে আপনার জন্য দোয়া করবে, মরে গেলে জানাজা পড়াবে, আর আপনি ইয়াবা মামলার আসামি। এরপর বিচারক বলেন, আপনি কী পড়ালেখা করেছেন? তখন আসামি বলেন, আমি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস করেছি। এরপর বিচারক বলেন, ছেলে মাদ্রাসায় হাফেজি পড়ে, আপনি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস। কেন ইয়াবার মামলার আসামি হলেন? তখন আসামি বলেন, স্যার আমাকে ইয়াবা দিয়ে মামলা দিয়েছে। এরপর বিচারক বলেন, পবিত্র কোরআনের কোন সুরায় মাদক সম্পর্কে বলা আছে জানান। সুরা বাকারা, মায়েদা ও নিছা ভালো করে পড়বেন। এর মধ্যে পাবেন মাদক সম্পর্কে বলা কথা আছে। এরপর বিচারক বলেন, আর আপনার সাজা স্থগিত করা হলো। আর প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধায়নে থেকে আপনি (আসামি) ৫০টি গাছ লাগাবেন, পবিত্র আল কোরআনের সুরা বাকারা, মায়েদা, নিছা ভালো করে পড়বেন এবং আপনার ছেলে যে মাদ্রাসায় পড়ে সে মাদ্রাসায় ভালোমানের কিছু বই উপহার দেবেন।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৩ নভেম্বর শাহবাগ থানাধীন হোটেল আপ্যায়নের পূর্বপাশ থেকে মো. ইয়াকুব আজাদ পাঁচ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়। ওইদিন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক কাজী হাবিবুর রহমান এ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর এস এম এলতাস উদ্দিন ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলাটির বিচার চলাকালে আদালত চার্জশিটভুক্ত ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। ২০১৫ সালের ৫ জুলাই রায় ঘোষণা করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাশেদ তালুকদার। রায়ের পর আসামি পরোয়ানামূলে ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর গ্রেপ্তার হয় এবং ২ নভেম্বর তিনি জামিন পেয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল দায়ের করেন।
মন্তব্য করুন