শেখ হাসিনার আগে ১৯৭১ সালে গণহত্যার দায়ে জামায়াতে ইসলাম, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়ার বিচার করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে এ কথা বলেন শাজাহান খান।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার যে অভিযোগের বিচার হচ্ছে, সেই অভিযোগের চেয়ে একাত্তরের অভিযোগ গুরুতর। ১৯৭১ সালে লাখ লাখ মানুষকে হত্যায় জামায়াত জড়িত। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যাসহ তিন হাজার সেনা কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। এরশাদ সাহেবও হত্যা চালিয়েছে। খালেদা জিয়া দুইবার ক্ষমতায় এসে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। তারাও গিলটি। তাদের বিচারের পরে শেখ হাসিনার বিচার হবে।’ এ সময় তাকে প্রশ্ন করা হয় অনুতপ্ত কিনা? জবাবে শাজাহান খান বলেন, অবশ্যই অনুতপ্ত।
এর আগে জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে মাদ্রাসা ছাত্র মো. আরিফ নিহতের মামলায় শাহাজান খান, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার সাব-ইন্সপেক্টর মাহমুদুল হাসান। আদালত তাদের উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির দিন ২৩ এপ্রিল ধার্য করেন।
এদিন শুনানিকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে বলেন, ‘হত্যা মামলা। এরা আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছে। আন্দোলন দমাতে যা যা করার করেছে।’
শাজাহান খানের পক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন। তিনি বলেন, শাজাহান খান আট বারের এমপি। এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা চিৎকার করে বলতে থাকেন, অবৈধ এমপি।
তখন শাজাহান খানের আইনজীবী বলেন, বিএনপির আমলেও তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাহলে সেই নির্বাচনও কি অবৈধ ছিল।
তিনি বলেন, তার বয়স ৭৬। বৃদ্ধ মানুষ। তাকে একাধিকবার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডে কোনো অগ্রগতি নেই। ন্যায়বিচারের স্বার্থে রিমান্ড বাতিল করবেন। আর এজাহারে উল্লেখ আছে, পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। উনি তো আর পুলিশের কেউ না।
এ সময় তানভীর হাসান সৈকত হাত উঁচিয়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে চান। আদালত অনুমতি দিলে বলেন, ‘আমি মামলার ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত না। ছাত্রলীগ খুনি দল নয়। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, আছি। আমি ছাত্রলীগের গর্বিত কর্মী। এসময় বিএনপিপন্থিদের তোপের মুখে পড়েন সৈকত। আদালতে হট্টগোল শুরু হয়। এরই মাঝে কথা চালিয়ে যান সৈকত।
তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগে থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটিও হত্যাকাণ্ড হয়নি। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই...’ বলতে গেলে আবারও হট্টগোল দেখা যায়। তখন তাকে থামতে বলা হয়।
এরপর ওমর ফারুক বলেন, শাজাহান খান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। আন্দোলনের সময় গণভবনের মিটিংয়ে উপস্থিত ছিল। তিনি পরিবহন সম্রাটও।
এ সময় আদালতকে সালাম দিয়ে শাজাহান খান বলেন, ‘আমার ৫টা ব্লক। ২০২৩-এ এনজিও গ্রাম করি। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন এক বছর পর দেখে ব্যবস্থা নিবেন। কিন্তু ২৪-এর জুলাইয়ের আন্দোলনের কারণে যেতে পারিনি।’
তিনি বলেন, আমাকে গ্রেপ্তারের পর চার দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়। দুই দিন পরই হাসপাতাল নেওয়া হয়। এরপর দুইবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রিমান্ড দিলে যেন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এ সময় সৈকত বলেন, আমি ছাত্রলীগের কর্মী। আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটিও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি।
এ সময় আইনজীবীরা আবারও চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু করেন। তখন সৈকতের পাশে দাঁড়ান শাজাহান খান। আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, একজন বন্দি কথা বলায় আপনার সামনে আইনজীবীরা কীভাবে থ্রেট দিচ্ছে। এর বিচার আপনাকেই করতে হবে।
এ সময় আইনজীবীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা বলতে থাকেন, শাজাহান খান তাদের থ্রেট দিচ্ছেন। এ সময় ওমর ফারুক বলেন, কোর্টের পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব সবার। আসামিরা এ ধরনের কথা বললে আমরাও কথা বলব। পরে আদালত শাজাহান খানের একদিন এবং পলক ও সৈকতের দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই বিকেলে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী এলাকার বউবাজারের রোডে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গোলাগুলিতে চোখে গুলি লাগে লর্ড হাডিক্ট সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম প্রথম বর্ষের ছাত্র আরিফের। চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আরিফের বাবা মো. ইউসুফ যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন।
মন্তব্য করুন