বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা, চেম্বার ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আওয়ামীপন্থি ৬১ জন আইনজীবীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সময় আওয়ামীপন্থি ১৯ আইনজীবীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার (০৬ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। জামিন পাওয়া ১৯ জনের মধ্যে ১৮ জনই মহিলা আইনজীবী।
এদিন সকালে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণপূর্বক জামিনের আবেদন করেন এসব আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। সকাল থেকেই শুনানির জন্য আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় বাড়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের। এ সময় বাড়তি পুলিশ মেতায়েন করতেও দেখা যায়। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাদের জামিন শুনানি শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে বিকেল ৫টার পর আদালত এই আদেশ দেন।
জামিন নামঞ্জুর হওয়া উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান মানিক, গাজী শাহ আলম, মাহবুবুর রহমান, আসাদুর রহমান রচি, ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের সাবেক পিপি নজরুল ইসলাম শামীম। জামিন পাওয়া আসামিদের মধ্যে আবু সাঈদ সাগর, শারমিন সুলতানা হ্যাপি, সালেহা আক্তার শিল্পী, জেসমিন আক্তার, তাসলিমা ইয়াসমিন নদী, শিখা ইসলাম, মিতা, শায়লা পারভীন পিয়া ও সালমা হাই টুনি রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলার এজাহারনামীয় ১১৫ আইনজীবী হাইকোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন পান। এ অন্তর্বর্তী জামিনের মেয়াদ আগামীকাল সোমবার শেষ হবে। এজন্য হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়া ৮৩ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত নয়জনের জামিন মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া ৬৪ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তবে তিনজন আদেশ শুনে আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
পলাতক হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামীপন্থি আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন কালবেলাকে বলেন, ‘আমি জামিনের আবেদন করেছিলাম। পরে শুনানি শুরু হওয়ার আগেই প্রত্যাহার করে নিই। আদেশ হওয়ার পরে নয়। তাই আমি পলাতক নই।’
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে আসামিরা ঢাকা আইনজীবী সমিতির সম্মুখ থেকে বেআইনি জনতাবদ্ধে আবদ্ধ হয়ে অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তারা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় ভুক্তভোগী আইনজীবী মামলা শুনানি শেষে করে ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে যান। তখন আসামি আনোয়ার শাহাদাৎ শাওন হেলমেট পড়ে পিস্তল দিয়ে হত্যার উদ্দেশে গুলি তাক করে। আসামি ওয়াকিল লোহার রড দিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশে আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর রক্তাক্ত জখম হন।
এ ছাড়া অন্য আসামিরা স্লোগান দিয়ে বাদীসহ অন্য আইনজীবীদের কিলঘুষি মারে এবং লোহার রড ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারাত্মক আঘাত করে। আসামিরা বিএনপিপন্থি আইনজীবীগণের চেম্বার ভাঙচুর ও লাখ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। আসামিরা আশপাশের আইনজীবীদের প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। আসামিরা ঢাকা আইনজীবী সমিতির চেম্বার ভবন ও ভবনের গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এক কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেন। এ ঘটনায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামীপন্থি ১৪৪ আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী বাবু।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, ঢাকা মহানগর আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আব্দুল্লাহ আবু, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বাদল, মো. সাইদুর রহমান মানিক, মো. মিজানুর রহমান মামুন, আব্দুর রহমান হাওলাদার, গাজী মো. শাহ আলম, আব্দুল বাতেন, মাহবুবুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার গোলাম কিবরিয়া জুবায়ের, মোহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাৎ শাওন, মো. ফিরোজুর রহমান মন্টু, মো. আসাদুজ্জামান খান রচি ও সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম।
মন্তব্য করুন