বিএনপির স্টান্ডিং কমিটির সমন্বয়ক ও ভারপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে আশরাফুজ্জামান মিনহাজ ওরফে মিনহাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হকের আদালতে অ্যাডভোকেট ইলতুৎমিশ সওদাগর এ্যানি বাদী হয়ে মামলার আবেদন করেন।
আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে আসামিকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তারেক রহমানের নির্দেশে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে জানান তিনি।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আশরাফুজ্জামান একজন মেধাবী শ্রেণীর প্রতারক। নিজেকে কখনও কানাডার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক, কখনো যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর পরিচয় দিয়ে সম্মান অর্জন করেছে। নিজেকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হিসেবে পরিচয় দেওয়া এ আসামির শিক্ষা বিষয়ক ভ্রান্ত ও মিথ্যা পরিচয়ের সূত্র ধরে সমাজে বিত্তশালী লোকের খুব কাছে যাওয়ার সুযোগ হওয়ার পথ ধরেই বিভিন্ন কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদানের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আয় করাই তার মূল পেশা।
তার প্রতারণার সূচনা হয় ২০০৮ সালে ওয়ান ইলেভেনের সেনা সমর্থনে আওয়ামী সরকারে উত্থানের মধ্য দিয়ে। ২০০৯ সালে সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হওয়ার পর তার জামাতা পরিচয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের চাকুরির পদোন্নতি করা, বদলি করা এবং নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ সম্পদ অর্জন করে। অর্থের নেশা আসামিকে এতটাই মোহাচ্ছন্ন করেছিল প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের ও পুলিশের ভয়ভীতি দেখিয়ে নিরীহ ও নিরপরাধ ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আদায় করা তার মূল লক্ষ হওয়ার ধারাবাহিকতা সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে জেল হাজতে পাঠান।
আরও বলা হয়, জুলাই-আগষ্টের বিপ্লব পরবর্তীতে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন করে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সমন্বয় ও বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সবার কাছে ক্ষমতাধর হিসেবে সমাদৃত করার জন্য বিদেশি সীম দিয়ে ফেসটাইম, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ দ্বারা টার্গেট করে ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলে ও কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছে বুঝিয়ে ভিকটিমের কাছে আস্থা অর্জন করে অর্থ আদায় করে। চলতি মাসে আসামি তার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে মামলার দুই নম্বর সাক্ষী মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মনোনীত স্ট্যান্ডিং কমিটির সমন্বয়কারী ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয় এবং তাকে পরবর্তীতে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে স্থান করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে দলের সিদ্ধান্তমতে শেরেবাংলা নগর থানায় যান মামলা করতে। তবে থানা মামলা না নেওয়ায় আদালতে মামলা করেন তিনি।
এর আগে, রাষ্ট্রদ্রোহী ও সন্ত্রাসী মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় প্রতারক আশরাফুজ্জামান মিনহাজ ওরফে মিনহাজ উদ্দিনকে। বুধবার (২৬ মার্চ) শরীয়তপুরের নড়িয়া থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনীর একটি টিম।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) ‘দুর্ধর্ষ এক প্রতারকের নাম আশরাফুজ্জামান মিনহাজ’ শিরোনামে দৈনিক কালবেলা পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়, নতুন নতুন কায়দায় প্রতারণা করে অর্থ কামান তিনি। সুবিধা অনুযায়ী কখনো নিজেকে পরিচয় দেন কানাডার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক। আবার কোথাও বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। বর্তমানে নিজেকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর দাবি করেন। নিজেকে বিত্তবান পরিচয় দিয়ে সুইস ব্যাংকে ৫৫ মিলিয়ন ডলার গচ্ছিত আছে বলেও দাবি তার। বিসিএস ক্যাডার ‘কথিত’ স্ত্রীর প্রভাব দেখিয়ে ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলার আসামি করে আবার ভুক্তভোগীদের সহযোগিতার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই তার মূল পেশা। প্রতারক মিনহাজ ও তার স্ত্রীর এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দিয়েছেন একজন ভুক্তভোগী।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস.এন. মো. নজরুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার সখ্য আছে—এমনটি দাবি করে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন মিনহাজ। এই প্রতারকের বিষয়ে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। তার অবস্থান শনাক্ত করে তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করব আমরা। মিনহাজ বর্তমানে দেশে আছেন কি না, তাও জানতে চেয়েছেন নজরুল ইসলাম।
সেসময় দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটির পর সতর্কবার্তা দিয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। তারা জানিয়েছিল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে এমনটি দাবি করে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন মিনহাজ। তার এ দাবি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছিল বিএনপি।
মন্তব্য করুন