দেনমোহর পরিশোধে টাকার বাজারদর বা বর্তমান মূল্যের তারতম্য ঠিক রেখে বাদীকে পাওনা নির্ধারণ করে আদেশ দিয়েছেন কুমিল্লার পারিবারিক আদালত। রায়টিকে ব্যতিক্রমী ও সময়োপযোগী বলেছেন আইনজীবীরা। রায়ে একইসঙ্গে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে নির্দিষ্ট টাকা পরিশোধের কথাও বলেছেন বিচারক।
বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) কুমিল্লার পারিবারিক আদালতের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ শেখ সাদী রহমান এ ‘ব্যতিক্রর্মী’ রায় ঘোষণা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ এর সরকারী আইনজীবী বদিউল আলম সুজন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাদীর আইনজীবী মো. আজাদ হোসেন বলেন, ২০২২ সালে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে একই উপজেলার বিল্লাল হোসেনের ছেলে ইব্রাহিম খলিলের বিয়ে হয়। বিয়েতে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা উসুল দেখিয়ে ২ লাখ টাকা বাকি রাখা হয়।
পরে এক বছরের মাথায় ২০২৩ সালের জুনে ইব্রাহিম খলিল স্ত্রী সুমাইয়াকে তালাক দিলে দেনমোহর ও ভরণপোষণের মামলা করা হয়। ওই মামলার বিচার শেষে বৃহস্পতিবার আদালত রায় প্রদান করেন।
রায়ে বলা হয়, বাদী ও বিবাদীর বিয়ে হয়েছিল ২০২২ সালে, এখন ২০২৫ সাল। প্রতিবছর মুদ্রাস্ফীতির কারণে টাকার মানের তারতম্য ঘটে যা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে স্পষ্ট। এ অবস্থায় দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৫১ ধারা প্রয়োগ করে মুদ্রাস্ফীতির তারতম্য অনুসারে বাদীর দেনমোহরের প্রকৃত মূল্য ২ লাখ ৬২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হল এবং বাদী ওই টাকা পাওয়ার হকদার।
এছাড়াও রায়ে আরও বলা হয়, বাদী ছয় মাসের ভরণপোষণে ‘খোরপোশ’ বাবদ ৪২ হাজার টাকা এবং ইদ্দতকালীন তিন মাসের ভরণপোষণ বাবদ ২১ হাজার টাকারও হকদার।
নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ এর সরকারী আইনজীবী বদিউল আলম সুজন আরও বলেন, ‘এ রায় অবহেলিত নারী সমাজের জন্য যুগান্তকারী বলে মনে করছি। কারণ, আমাদের মুসলিম রীতিতে বিবাহ বিচ্ছেদের পর দেনমোহর নিয়ে নারীদের অনেক বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হতে হয়। বিচারক বাস্তবতা উপলব্ধি করেছেন।’
ব্লাস্ট কুমিল্লার আইনজীবী শামীমা জাহানের মতে, ‘এ রায়ের মধ্য দিয়ে নারীরা বাজার দরে দেনমোহর প্রাপ্য হবেন। বিয়ের সময়ের মূল্যে নয়। টাকার মান বা তারতম্য বিবেচনায় দেনমোহরের হার নির্ধারিত হবে। আর সেই টাকাও দ্রুত নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। তালবাহানায় সময়ক্ষেপন বন্ধ হবে। নারীদের পাওনা দেনমোহর নিয়ে অবহেলা এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধে সচেতনতা তৈরি হবে।’
মন্তব্য করুন