রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ/বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিশেষ নিরাপত্তা প্রদানবিষয়ক প্ররক্ষা নির্দেশিকা ২০২৫-এর বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৮ মার্চ সশরীরে হাইকোর্টে হাজির হয়ে তাকে এ নির্দেশিকার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
ওই নির্দেশিকায় বিচার বিভাগকে হেয় করার অভিযোগে বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। নির্দেশিকার বিষয়টি আইনজীবী শিশির মনির হাইকোর্টের নজরে আনেন।
গত ২ মার্চ জারি করা নিরাপত্তা প্রদানবিষয়ক প্ররক্ষা নির্দেশিকায় দেশের প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের পদমর্যাদাক্রমের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে এবং বিষয়টি অত্যন্ত অবমাননাকর বলে হাইকোর্টে উল্লেখ করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদমর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) এর সঙ্গে নির্দেশিকাটির ক্রম সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ প্রার্থনা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
একপর্যায়ে আদালত এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র মনজিল মোরশেদ ও আইনজীবী শামসুদ্দিন বাবুর বক্তব্য শোনেন। এরপর হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিকে তার স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশিকার বিষয়ে ব্যখ্যা দিতে আগামী ১৮ মার্চ হাইকোর্টের তলব করেন। সেই সঙ্গে নির্দেশিকাটির কার্যক্রম ৩ মাসের জন্য স্থগিত করে রুল গত ২ মার্চ জারি করা নিরাপত্তা প্রদানবিষয়ক প্ররক্ষা নির্দেশিকাটি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
এ ছাড়া প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, জেলে ও দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের নিরাপত্তার বিষয়টি হাইকোর্ট যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে বলেছেন বলে আদেশের পর জানান আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ২ মার্চ নির্দেশিকাটি জারি করা হয়। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে যে নিরাপত্তা প্ররক্ষা নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, এখানে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিকে রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ বাকিগুলোর সঙ্গে একইরকম তুলনা করা হয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতিদের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের সঙ্গে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এসব বিষয়ে আপিল বিভাগ একটি রায় দিয়েছিলেন, সে মামলায় আপিল বিভাগ যে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা ক্রম) ফিক্স করে দেওয়া হয়েছে এবং সর্বশেষ ২০২০ সালের যে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স আছে তার সব কিছু লঙ্ঘন করে এটাকে জারি করা হয়েছে। এজন্য এই নোটিফিকেশনকে আমরা আদালতের নজরে নিয়ে এসেছি। আমরা আদালতে ২০২০ সালের যে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স দেখিয়েছি, আপিল বিভাগে যে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে, সে রায়ের কথা বলেছি। সেই মামলার রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য ২৭ এপ্রিল দিন ধার্য আছে। এই প্রেক্ষিতে কী করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা জারি করা হলো, এটা বিস্ময়কর বিষয়।
শিশির মনির আরও বলেন, আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে এই ধরনের নীতিমালা জারি করে মূলত বাংলাদেশের সংবিধান ও বিচার বিভাগের প্রতি বৃদ্ধাঙুলি প্রদর্শন করেছেন। আমাদের এই কথা শুনে, অন্যান্য সিনিয়র আইনজীবীদের কথা শুনে আদালত একটি সুয়োমোটো রুল ইস্যু করেছেন। রুলে কেন এই নির্দেশিকাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন। তিন মাসের জন্য এই নির্দেশিকা স্থগিত করেছেন। আর সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিকে আগামী ১৮ মার্চ আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে তার কন্ডাক্ট, কী কারণে পত্র জারি করেছেন তার আচরণ ব্যাখ্যার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে (সংশোধিত) রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারের পর প্রধান বিচারপতির মর্যাদা ক্রম রয়েছে।
মন্তব্য করুন