তুরাগ নদীর তীরবর্তী ৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে আগামী ৪ মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিচারপতি মোহাম্মদ আশরাফুল কামাল এবং বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের আদালতে শুনানি শেষে আদালত এ নির্দেশ দেন।
শুনানি শেষে আদালত কয়েকটি নির্দেশনা প্রদান করেন। নির্দেশনাগুলো হলো -
১. আদালত আদেশে বিবাদীদের আগামী ৪ মাসের মধ্যে জুডিশিয়াল ইনকোয়ারির প্রতিবেদনে অনুসারে অবৈধ দখলদারদের এবং ১০ থেকে ২৩ নং প্রতিবাদীপক্ষকে তুরাগ নদীর অবৈধ দখল থেকে অপসারণ করে, এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী চার মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
২. আদালত অপর এক আদেশে আগামী ৬ মাসের মধ্যে ডিজিটাল ডাটাবেজ প্রণয়নের ক্ষেত্রে এসপিএ, আরআর, এসও স্যাটেলাইটের সাহায্যে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব নদনদী খাল বিল জলাশয়ের ভৌগোলিক অবস্থান নির্ণয় এবং জীববৈচিত্র্য বিষয়ক তথ্যাদি সংগ্রহপূর্বক সব ইউনিয়ন উপজেলা এবং জেলার ম্যাপ প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট স্ব স্ব দপ্তর সব নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত স্থানে বিলবোর্ড আকারে প্রদর্শন করবে এবং নাগরিক নির্ধারিত ফিসের বিনিময়ে যেন উক্ত ডাটাবেজ বা ম্যাপ সংগ্রহ করতে পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলা এবং জেলা প্রশাসনের কার্যালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং সম্পাদন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।
৩. আদালত অপর এক আদেশ সাবেক নদী কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদারের প্রস্তুতকৃত অবৈধ দখলদারদের তালিকা আপডেট করে আগামী ছয় মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করেন।
শুনানিতে HRPB এর কৌশলী সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, তুরাগ নদীর অবৈধ দখলদারদের কোনভাবেই উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নদী এবং নদীর জীববৈচিত্রসহ পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদী তীরবর্তী এলাকা নদীর তীরে অবস্থিত অবৈধ কলকারখানার কারণে দূষণ হচ্ছে। যা বন্ধ করা না গেলে পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
HRPB-এর পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা। সরকার পক্ষে ছিলেন ডিএজি।
এর আগে ২০১৬ সালে তুরাগ নদীর তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (HRPB) একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। রিট পিটিশন শুনানি শেষে আদালত জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করে তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনার তালিকা আদালতে দাখিল করতে বলেন। পরবর্তীতে গাজীপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট একটি প্রতিবেদন দাখিল করে প্রায় ৩০টি ব্যক্তিগত ও শিল্প-প্রতিষ্ঠান দখলদারদের নাম উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। উক্ত রিট পিটিশন শুনানি শেষে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ‘নদীর জীবন সত্তা’ ঘোষণা করে ১৭ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন এবং বিষয়টি continues mandamus হিসাবে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল দায়ের করা হলে আদালত কয়েকটি নির্দেশনা ও মতামত দিয়ে আপিলটি নিষ্পত্তি করেন।
রায় প্রদানের পরে বেশ কয়েক বছর পার হলেও রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় এবং আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় এবং নদী তীরবর্তী অবৈধ প্রতিষ্ঠানসমূহ উচ্ছেদ না হওয়ায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আদালতে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়।
মন্তব্য করুন