কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৫০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কোনো ফ্যাসিবাদ সরকারকে সুযোগ না দেওয়ার পরামর্শ মাহমুদুর রহমানের 

আদালত চত্বরে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। ছবি : কালবেলা
আদালত চত্বরে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। ছবি : কালবেলা

কোনো ফ্যাসিবাদ সরকারকে আগামীতে আর সুযোগ না দেওয়ার জন্য দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানি শেষে এ আহ্বান জানান তিনি।

মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিদায় হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণকে এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। কোনো ফ্যাসিবাদ সরকারকে উঠতে দেবেন না।’

তিনি বলেন, ‘এই মামলাটি হয়েছিল শেখ হাসিনার পুত্র নিয়ে। এমন শতাধিক মামলা আমার বিরুদ্ধে আছে। শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপকে নিয়ে ৩৬টি মামলা রয়েছে। এ রকম একটি মামলাতেই আমার ওপর হামলা করা হয়েছিল৷ আমি আল্লাহ রহমতে জীবিত আসতে পেরেছি। তবে ধরে নিচ্ছি এই যে লড়াই, যতদিন জীবিত আছি এই লড়াই চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আমার দেশের যে লড়াই, সম্পাদক হিসেবে আমার যে লড়াই সেটা অব্যাহত থাকবে।’

মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এ মামলা যখন করা হয় তখন জেলে বন্দি ছিলাম। এ মামলার সঙ্গে কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি ২০০৫ সালের পর আমি আমেরিকা যায়নি। অথচ এ মামলার সময় দেখানো হচ্ছে ২০১২ সালে। এ সময় আমি পত্রিকা অফিসে বন্দি ছিলাম। পত্রিকা অফিস পুলিশ, র‍্যাব ঘিরে রেখেছিল। এটাতে প্রমাণিত হয় একটা রাষ্ট্র কতটা নির্মম হতে পারে মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করতে।’

তিনি আরও বলেন, ‌ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে প্রথম দিন থেকে প্রতিবাদ করা উচিত। আমরা যদি প্রথম দিন থেকে প্রতিবাদ করতাম, তাহলে ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদ সরকার দ্বারা এত জুলুম, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হতো না। এভাবে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও দিল্লির কাছে বিসর্জন দেওয়া হতো না। জণগণের কাছে আমার আহ্বান, আর কোনো ফ্যাসিবাদী সরকারকে দেশে জায়গায় দেবেন না। সকল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই যেন অব্যাহত থাকে। '

ন্যায়বিচার পাবেন উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, 'আশা করি, রায়ে আমি ন্যায়বিচার পাব। কারণ ফ্যাসিবাদের পতন ও বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়েছে। ইতিপূর্বে ফ্যাসিবাদের উত্থানের পক্ষে বিচার বিভাগের ভূমিকা রয়েছে। এটা বারবারে প্রমাণিত হয়েছে। পরবর্তীতে বিচার বিভাগের সহযোগিতায় ফ্যাসিবাদের উত্থান ঠেকানো গেছে। আমি আশাবাদী, আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাব।'

এর আগে বিদেশ থেকে ফিরে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওইদিন মামলাটিতে আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। পরে ৩ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলায় আপিল করা হয়। ওইদিন জামিন পান মাহমুদুর রহমান।

মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যে কোনো সময় থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার আসামিরা একত্রিত হয়ে যোগসাজশে শেখ হাসিনার ছেলে ও তার প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলা করেন। ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

পরে গত বছরের ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত আমার দেশ পত্রিকার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ ৫ জনের পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন- জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ, রিজভী আহমেদ সিজার ও মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।

আসামিদের দণ্ডবিধির ৩৬৫ ধারায় (অপহরণ) পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত। জরিমানার টাকা অনাদায়ে তাদের আরও একমাসের কারাভোগের আদেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া একই আইনে ১২০-খ ধারায় (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) দুই বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।

গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাংবাদিক শফিক রেহমান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মাহমুদুর রহমান কারাগারে যাওয়ার পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে এ মামলায় সাজার বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের শর্তে আত্মসমর্পণ করেন শফিক রেহমান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জিয়াউলের দেশ-বিদেশে শত কোটির সম্পদ, আছে ভিনদেশের নাগরিকত্ব

কর্মশালায় উদ্বেগ / প্রতি বছর ৪ শতাংশ হারে বাড়ছে ভূমিধস

টাকা দিলে নেন না ভিক্ষা, চান ডলার-পাউন্ড

পরীক্ষা না দিয়েও উত্তীর্ণ ছাত্রলীগ নেত্রী!

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ভারতীয়দের দেশে ফেরানো নিয়ে মুখ খুললেন জয়শঙ্কর

রিজার্ভ নামল ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে

কারাগারে বিনামূল্যে চক্ষু ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর যুবদল নেতা বহিষ্কার

২৪ জানুয়ারিকে স্মরণ করলেন তারেক রহমান

হাইমচরে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন

১০

কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড বন্ধ হচ্ছে

১১

পাঁচতলা বাড়ির মালিক ওয়াসার সাবেক গাড়ি চালকের স্ত্রী

১২

দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আহ্বান ছাত্রশিবির সেক্রেটারির

১৩

বিএনপি কর্মীর দুই চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা

১৪

ব্যস্ত সড়কে ইসলামিক স্মৃতিস্তম্ভ, নজর কাড়ছে সবার

১৫

মাছ ধরতে গিয়ে পাওয়া গেল চায়না রাইফেল

১৬

মামলা করলেন সারজিস

১৭

আইসিসিবিতে দেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক এক্সপো ভিলেজের যাত্রা শুরু

১৮

সালমান এফ রহমানের ২৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

১৯

সৌদিতে বজ্র-বৃষ্টির পূর্বাভাস, নাগরিকদের সতর্কবার্তা

২০
X