সম্প্রতি রাজধানীর খিলক্ষেতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন স্বদেশ প্রপার্টিসের সিকিউরিটি গার্ড কাউসার দেওয়ান। এই ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় মামলা করেন কাউসার দেওয়ানের বোন মোর্শেদা খাতুন। মামলায় ১৫ জন ছাড়াও অজ্ঞাত ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও সংশ্লিষ্টরা জানান, ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত জুলাই বিপ্লবে একাধিক হত্যা মামলার আসামি ওই ব্যবসায়ী গ্রুপের চেয়ারম্যান আবারও হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। তার নির্দেশে সর্বশেষ হত্যার শিকার হয়েছেন স্বদেশ প্রপার্টিজের সিকিউরিটি গার্ড কাউসার দেওয়ান।
এ ঘটনায় মামলা হলেও এক বিএনপি নেতার সহযোগিতায় ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে এই ভুমিদস্যু। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলার কারণে ২নং আসামি আনোয়ার হোসেন দেওয়ানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তবে মামলার পরও অন্য আসামিরা বিএনপি নেতার সহযোগিতায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করে বলা হয়, সন্ত্রাসীরা ৩০০ ফিটের পাশে স্বর্ণালী প্রজেক্টে কর্মরত লোকদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে দেশীয় অস্ত্র, দা ও চাপাতি দিয়ে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। হামলায় স্বর্ণালী প্রজেক্টের অনেকেই আহত হন। এদের মধ্যে সিকিউরিটি গার্ড কাউসার দেওয়ান মাথার মধ্যস্থানে, ঘাড়ে, হাতের বাম পাশ ও কপালে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে পড়ে যান।
সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর অন্য সিকিউরিটি গার্ড ও এলাকাবাসী মিলে কাউসারকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, ওই গ্রুপের কর্ণধার বিগত স্বৈরাচারের আমলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে হত্যা, জমি দখল, নারী নির্যাতনসহ নানারকম অপকর্ম করেছেন। সাবেক সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের ম্যানেজ করে এসব অপকর্ম করত। এর বাইরে বিএনপির নেতার সঙ্গে সখ্য রেখে দুই দিক ম্যানেজ করার মিশনেও ছিলেন তিনি।
৫ আগস্টের পর বিএনপির ওই ভাইস চেয়ারম্যানের পৃষ্ঠপোষকতায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে ব্যবসায়ী গ্রুপটি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা না পেয়ে দখলদার গ্রুপটির অত্যাচারের শিকার ভুক্তভোগীরা সংবাদ সম্মেলন করার চেষ্টা করেও হোঁচট খান।
গত ২৮ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ভুক্তভোগী, প্লট ও জমির মালিকরা সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে হামলার শিকার হন। অভিযুক্ত ব্যবসায়ী গ্রুপের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা করে। সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন অন্যতম ভুক্তভোগী আয়োজক আনোয়ারা মায়া।
মায়ের অনুপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস স্বর্ণা। তিনি বলেন, আমি আনোয়ারা মায়ার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস স্বর্ণা, ২০০৯ সালে খিলক্ষেত থানার বড়ুয়া দক্ষিণ পাড়ায় আমাদের এক বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে গ্রুপটি। এই জমির দলিল, নামজারি, খাজনাসহ সব কাগজপত্র আমার মায়ের নামে। এই জমি নিয়ে বিবাদের জেরে আমার মামাকে তারা হত্যা করেছে। আমার মা আদালতে গেছেন তাদের বিরুদ্ধে। আদালত ওই জমির ওপর ইনজাংশন দিয়ে বলেছেন, কোনো পক্ষ কিছু করতে পারবে না।
তিনি বলেন, বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপের মালিক ভূমিদস্যুরা এতদিন আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে দখলবাজির মাধ্যমে জমির অবৈধ ব্যবসা করেছে। শুধু তাই নয়, ওই গ্রুপের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের মধ্যে যারা ওই এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা হলো- আব্বাস আলী, ওলীউল্লাহ, রাশেদুল, নুরুল্লাহ, ফাহিম, আনিস, জিহাদ, নুরুল, সাইফুল, জাহিদুল, মজিবর, রিয়াজসহ আরও অনেকে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্রুপটি এখন বিএনপির ছত্রছায়ায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। খিলক্ষেত, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও বড়ুয়া মৌজায় প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে ভিটেমাটি ছাড়া করা হচ্ছে। স্থানীয় সাধারণ মানুষ তাদের হাতে জিম্মি।
মন্তব্য করুন