‘সহকারী জজ’ ও ‘সিনিয়র সহকারী জজ’ পদবি পরিবর্তন করে যথাক্রমে ‘সিভিল জজ’ ও ‘সিনিয়র সিভিল জজ’ নামকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। এ বিষয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব গত সপ্তাহে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো এ–সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সহকারী জজ’ ও ‘সিনিয়র সহকারী জজ’দের সংগঠন ‘ইয়ং জাজেস ফোরাম’সহ জেলা আদালতের বিচারকেরা মনে করেন, বর্তমান ‘সহকারী জজ’ ও ‘সিনিয়র সহকারী জজ’ পদবি দুটি পরিবর্তন করা সময়ের দাবি। কারণ, এই পদবি বিচারকদের পেশাগত মর্যাদা ও দায়িত্ব সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে না; বরং এই পদবির কারণে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিচারকদের ক্ষমতা ও এখতিয়ার নিয়ে বিভ্রান্তি, দ্বিধা এবং অনাস্থার সৃষ্টি করে।
১৯৮৭ সালে বিসিএস অন্য ক্যাডারের পদবির অনুকরণে ‘মুনসেফ’ পদবিটি পরিবর্তন করে সিভিল কোর্টস (সংশোধন) আইন–১৯৮৭–এর মাধ্যমে ‘সহকারী জজ’ নামকরণ হয়, যা এখন পর্যন্ত চলমান আছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর বিচার বিভাগকে অন্য সার্ভিস থেকে একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ফলে ‘সহকারী জজ’ ও ‘সিনিয়র সহকারী জজ’ পদবির ব্যবহার বিচার বিভাগের মর্যাদা ও স্বাতন্ত্র্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং যথাযথ নয় বলে মনে করে অ্যাসোসিয়েশন।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন চিঠিতে বলেছে, আভিধানিকভাবে ‘সহকারী জজ’ অর্থ জজের ব্যক্তিগত সহকারী, প্রশিক্ষরত জজ, পেশকার, চুক্তিভিত্তিক জজ ইত্যাদি বোঝায়। সংবিধানের ১১৬ ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘সহকারী জজ’ ও ‘সিনিয়র সহকারী জজ’রাষ্ট্রের সার্বভৌম বিচারিক ক্ষমতা স্বাধীনভাবে পালন করেন। ১৮৮৭ সালের সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট অনুযায়ী, একজন ‘সহকারী জজ’ ও ‘সিনিয়র সহকারী জজ’–এর এখতিয়ার, ক্ষমতা ও কার্যাবলি সুনির্দিষ্ট এবং পৃথক। একজন সহকারী/সিনিয়র সহকারী জজ কোনোভাবেই কোনো জজ বা বিচারকের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন না। ‘সহকারী’ শব্দটি আপেক্ষিক অর্থ বহন করে এবং একজন বিচারকের পদবির শুরুতে ‘সহকারী’ শব্দটি থাকায় সাধারণ জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে; এমনকি একজন ‘সহকারী জজ’ বিচারক কি না, তা নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক হয়। ফলে অনেক সময় সহকারী/সিনিয়র সহকারী জজদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। অথচ একজন ‘সহকারী জজ’ পূর্ণাঙ্গ বিচারক এবং তিনি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত ও রায় প্রদান করেন। তাই সিভিল কোর্টের পদবি কাঠামোতে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে এবং ওই পদ দুটির মর্যাদা সুরক্ষায় পরিবর্তন আনা আবশ্যক।
ওই পদবি দুটি পরিবর্তন করে ‘সিভিল জজ’ ও ‘সিনিয়র সিভিল জজ’ নামকরণ হলে টেকসই হবে এবং দূর ভবিষ্যতেও তা পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে না বলে মনে করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশন বিশ্বাস করে, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আদালতের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং সহকারী ও সিনিয়র সহকারী জজ পর্যায়ের বিচারকদের অনাকাঙ্ক্ষিত বিভ্রান্তি ও বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবেন।
বিচারকদের পদবি পরিবর্তনের জন্য সরকারের আর্থিক কোনো সংশ্লেষ নেই উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, কেবল একটি অধ্যাদেশ জারি করে ১৮৮৭ সালের সিভিল কোর্টস অ্যাক্টের সংশ্লিষ্ট বিধান সংশোধন করে প্রচলিত সব আইনে তার প্রয়োগ ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে পারলেই তা বাস্তবায়ন সম্ভব।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলামের সই করা চিঠির শেষাংশে বলা হয়, তারা আশা করেন, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে বিচার বিভাগের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। অতএব উল্লিখিত প্রস্তাবের ভিত্তিতে ‘সহকারী জজ’ ও ‘সিনিয়র সহকারী জজ’ পদবি দুটি যথাক্রমে ‘সিভিল জজ’ এবং ‘সিনিয়র সিভিল জজ’ নামে পরিবর্তনের জন্য যথাশিগগির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছেন।
মন্তব্য করুন