বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় দাবি করে স্মারকলিপি দিয়েছেন বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) ঢাকার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল উদ্দিনের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি বরাবর এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এ সময় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. রেজোয়ান খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. ছালাউদ্দিনসহ ঢাকা জেলা কমিটির অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় করে অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতনভাতা প্রদান এবং বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অধীনে অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বিদ্যমান ব্লকপদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজনপূর্বক যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ রেখে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়ন করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হয়। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর শুধু বিচারকগণের জন্য ৬টি গ্রেড রেখে পৃথক পে-স্কেলসহ নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে ওই পে-স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। জুডিসিয়াল সার্ভিস পে-স্কেলের আলোকে বিচারকগণের বেতন-ভাতাদি প্রদেয় হলেও আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বিচারকগণের সঙ্গে একই দপ্তরে কাজ করা সত্ত্বেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বেতন স্কেলের আলোকে বেতন-ভাতাদি পেয়ে থাকেন। বিচারকগণের জন্য বিচারিক ভাতা, চৌকি ভাতা, দেওয়ানি আদালতের অবকাশকালীন ছুটি (ডিসেম্বর মাস) ফৌজদারি আদালতে দায়িত্ব পালনের জন্য এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অবকাশ ভাতা প্রদানের বিধান থাকলেও বিচার সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে অনুরূপ কোনো ভাতা প্রদান করা হয় না। এক কথায় বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর বিচারকগণের জন্য যেসব সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, বিপরীতে বঞ্চিত করা হয়েছে সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারক ব্যতিত আর কোনো প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদার পদ নেই। দ্বিতীয় শ্রেণির পদও খুবই নগণ্য। প্রতিটি জেলা জজশিপে উপজেলা ভিত্তিক আদালত থাকা সত্ত্বেও মাত্র ২টি করে দ্বিতীয় শ্রেণির (প্রশাসনিক কর্মকর্তা) পদ রয়েছে। তাছাড়াও অন্যান্য দপ্তরে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির জন্য যেখানে ৫ থেকে ৭ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতায় পদোন্নতির সুযোগ আছে। সেখানে অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের কর্মচারীগণকে উক্ত পদের জন্য ২০/২২ বছর অপেক্ষা করতে হয়। একটি জেলাতে জেলা জজ (১ম গ্রেডের) সর্বোচ্চ পদমর্যাদার কর্মকর্তা হলেও একমাত্র প্রশাসনিক কর্মকর্তা (১০ম গ্রেড) ব্যতিত অধীনন্ত সকলেই ১৩তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারী। পদোন্নতির ধারা উন্মোচনসহ নতুন পদ সৃজন না করায় অধিকাংশ কর্মচারীগণের পদোন্নতির সুযোগ একেবারেই রুদ্ধ। অনেক কর্মচারী পদোন্নতি ছাড়াই আক্ষেপ ও হতাশা নিয়ে একই পদে ৩৮/৪০ বছর চাকরি করেও পদোন্নতি বঞ্চিত থেকে অবসরে যাচ্ছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এ সময় দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বতন্ত্র নিয়োগবিধিসহ বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের বিদ্যমান ১ম থেকে ৬ষ্ঠ গ্রেডের পরবর্তী ৭ম থেকে ১২তম গ্রেডভুক্ত করে দীর্ঘদিনের বৈষম্য নিরসনের দাবি জানানো হয়।
মন্তব্য করুন