কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন

শেখ হাসিনাসহ ৯০ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরোনো ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরোনো ছবি

পুলিশ হেফাজতে এক জামায়াত কর্মীকে ২০১৩ সালে নির্যাতনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী, আইনজীবী, পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকসহ মোট ৯০ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করা হয়েছে।

রোববার (৬ জানুয়ারি) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা রহমানের আদালতে এ মামলা করেন ভুক্তভোগী জামায়াত কর্মী মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া (৫৫)। আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে শেরেবাংলা নগর থানাকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার শিব শংকর কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক এমপি ও মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, হাসানুল হক ইনু, হাসান মাহমুদ, আমির হোসেন আমু, দিলীপ বড়ুয়া, কামরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, রাশেদ খান মেনন, শ ম রেজাউল করিম, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, আ ক ম মোজাম্মেল হক।

আইনজীবীদের মধ্যে আসামি করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের দুদকের সাবেক আইনজীবী এম খুরশিদ আলম খান, অ্যাড. মোশাররফ হোসেন কাজল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. তুরিন আফরোজ, ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সাবেক চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান, সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নী, রানা দাশ গুপ্ত, মোহা. মোখলেছুর রহমান খান বাদল, জাহিদ ইমাম, তাপস কান্তি বল, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. আব্দুল্লাহ আবু, অ্যাড. হেমায়েত উদ্দিনকে।

এ ছাড়াও সাংবাদিকদের মধ্যে আছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান, একাত্তর টিভির শাকিল আহমেদ, ফারজানা রুপা, মোজাম্মেল হক বাবু, এটিএন নিউজের মুন্নী সাহা, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সুভাষ সিংহ রায় ও একাত্তর টিভির মোজাম্মেল হোসেন বাবু।

পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, বেনজির আহমেদ, হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদ, ডিএমপি সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, শেরেবাংলা নগর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মু. আব্দুল মমীনসহ অনেকে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, বাদী মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন ভূঁইয়া ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬.৩০ মিনিটে ব্যক্তিগত কাজে মিরপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজের সামনে যান। ওইদিন হরতালের সমর্থনে বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করে।

এসময় শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিলকারী ও পথচারী লোকজনদের ওপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করেছিল। একপর্যায়ে মিছিলকারীরা ছুটাছুটি শুরু করলে পুলিশ পথচারী ও মিছিলকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে বেধড়ক মারধর করে আটক করেছিল।

এরপর পুলিশ প্রায় ১১ জন পথাচারীকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। যাদের মধ্যে মামলার বাদী মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ফাহাদ, মাইন উদ্দিন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্র ইসমাইল, রাফাত, আব্দুস শহীদ ও আব্দুল বাসেতসহ ছয়-সাতজনকে পুলিশ হাত-পা বেঁধে নির্বিচারে গুলি করে। এর মধ্যে বাদী মোহাম্মদ আলমগীর হোসেইন ভূঁইয়া (৫৫) এবং অপর ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ফাহাদ (৩০) পুলিশের গুলিতে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। অপরজন মহিন উদ্দিন ওরফে মাঈন উদ্দিন (২২) পুলিশের গুলিতে গুরুত্বর আহত অবস্থায় দীর্ঘদিন চিকিৎসারত ছিলেন।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে পুলিশ আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেলেও চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে উল্টো বাদী আলমগীরসহ ১১ জনসহ এজাহার নামীয় ও ১৫০/১৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় নাশকতার পৃথক তিনটি মামলা করে তাকে গ্রেপ্তার দেখায়।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন বিক্ষোভস্থল থেকে গ্রেপ্তার করে ভুক্তভোগী আলমগীরকে শেরেবাংলা নগর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আসামি শেরেবাংলা নগর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মু. আব্দুল মোমিন বাদী আলমগীরের বাম পায়ে গুলি করে দেয়। এসময় থানার এএসআই আসফাদ্দৌলা, এসআই মছিউর, এসআই কামাল হোসেন, এসআই বজলুর রহমান আলমগীরকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাইফেলের বাট, লাঠি ও লোহার রড দিয়ে হাতে, কোমরে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাত করে।

এরপর পুলিশ আলমগীরকে প্রথমে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিউিট ও হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে ২ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান নিটোরে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

এরপর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শে ভুক্তভোগী আলমগীরের বাম পা কেটে ফেলা হয়। ফলে তিনি আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এ ঘটনায় সে সময় দৈনিক আমার দেশ ও দৈনিক নয়াদিগন্তে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পুলিশ কর্তৃক গুলিবৃদ্ধ হওয়ার পর চিরতরে পঙ্গু হয়ে ৩টি মামলায় জেল হাজতে দীর্ঘদিন আটক থাকার পর জামিনে মুক্ত হন বাদী।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আসছে সপ্তাহব্যাপী শৈত্যপ্রবাহ, শীতের দাপট থাকবে যেসব অঞ্চলে

যৌতুকের শিকলে বন্দি গৃহবধূ তানিয়া

৮ জানুয়ারি : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

সিরিয়ার সঙ্গে হাত মেলাল ইসরায়েলের মিত্র দেশ

৮ জানুয়ারি : আজকের নামাজের সময়সূচি

বুধবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

গোয়াইনঘাট সীমান্তে বিজিবি সদস্যের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা

‘আ.লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ভোগের বস্তু মনে করেছিল’

কর্ণফুলীতে জেলের জালে মর্টার শেল

খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় যুক্তরাজ্য বিএনপির দোয়া কর্মসূচি

১০

দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন খালেদা জিয়া : বিমানবন্দরে মির্জা ফখরুল

১১

ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

১২

ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুলকে ছুরিকাঘাত

১৩

মক্কায় শাহরুখ-গৌরীর ছবি, ‘ধর্ম বদল’ নিয়ে যা জানা গেল

১৪

লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন খালেদা জিয়া

১৫

ছাত্র-জনতার ওপর হামলার মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৬

অপপ্রচারের প্রতিবাদ ছাত্রশিবিরের

১৭

‘১৪ বছর পরেও ফেলানী হত্যার বিচার না হওয়া আমাদের জাতীয় ব্যর্থতা’

১৮

দিনাজপুরে তুলার কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

১৯

বিমানবন্দরে খালেদা জিয়া

২০
X