হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের শুনানির সময় মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) নিয়মের তোয়াক্কা না করে বিচারকের লিফট ব্যবহার করে সরাসরি এজলাসের খাস কামরার সামনে চলে যান তার ছেলে ডা. তানজির ইসলাম অদিত।
এ কাজে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের নেজারত বিভাগের নাজির শাহ্ মো. মামুনের বিরুদ্ধে। এমনকি আদালতে অদিতের সঙ্গে কোলাকুলিও করেছেন তিনি।
ভয়াবহ এসব অনিয়মের অভিযোগে নাজির শাহ্ মো. মামুনের অপসারণের দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ ও কক্ষ ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে কামরুল ইসলামের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আরিপ। পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ উপস্থাপনের পর শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন কামরুল ইসলাম এ মামলায় সম্পৃক্ত নন উল্লেখ করে জামিন আবেদন করেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজিজুল হক দিদার বলেন, ‘সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম ওয়াদুদ হত্যার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। কাজেই তার সর্বোচ্চ রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।’ এ সময় আদালত কামরুল ইসলামকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেন।
কামরুল ইসলাম বলেন, ‘যে মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে আমি সেই এলাকার সংসদ সদস্য কিংবা বাসিন্দা নই। এই দিন দিন নয়, দিন আরও আসবে।’ শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালত আসামির ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ সময় এজলাসে বিচারকের খাস কামরার সামনে কামরুল ইসলামের ছেলে অদিতের অবস্থান নিয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা উত্তেজিত হলে সেখান থেকে সটকে পড়েন তিনি ও নাজির শাহ্ মো. মামুন।
পরবর্তীতে দুপুরে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ও শেখ হাসিনার দোসর উল্লেখ করে নাজির শাহ্ মো. মামুনের অপসারণের দাবিতে আদালতে বিক্ষোভ ও ভাংচুর করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খোরশেদ মিয়া আলম বলেন, ‘নাজির মামুন নিয়ম ভেঙে হত্যা মামলার আসামির ছেলেকে বিচারকের আসনের পাশে নিয়ে গেছেন। এতে সরকারি নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে। বাইরের মানুষের বিচারকের লিফট দিয়ে প্রবেশ করে এজলাসে ঢোকার এখতিয়ার নেই। এতে করে ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হয়, মামলা পরিচালনা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’
আদালত সংশ্লিষ্ট সবার এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে বার সভাপতি আরও বলেন, ‘তার এমন আচরণের নিন্দা জানাই। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
নাজিরের রুম ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির কেউ এতে জড়িত নয়। ৫ আগস্টের আগে তারা আমাদের কক্ষ ভাঙচুর করেছে কিন্তু আমরা তেমনটা করিনি। মঙ্গলবার আমাদের নিয়মিত মিছিল হয়, সেখানে আজ মামুনের বিচার দাবির প্রসঙ্গটি যোগ হয়েছে। সেই মিছিলের পেছন থেকে উচ্ছৃঙ্খল তৃতীয় পক্ষের কেউ এ ঘটনা ঘটাতে পারে।’
মন্তব্য করুন