রাজধানীর নিউমার্কেট থানার ব্যবসায়ী ওয়াদুদ হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের ৮ দিনের রিমান্ড আদেশ দিয়েছেন আদালত। রিমান্ড শুনানি চলাকালে আদালতে কামরুল ইসলাম উত্তেজিত হয়ে আদালতকে বলেছেন, যে মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে আমি সেই এলাকার সংসদ সদস্য কিংবা বাসিন্দা নই। এই দিন দিন নয়, দিন আরও আসবে'।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সঙ্গে সঙ্গে তাকে দুয়োধ্বনি দেন রাষ্ট্রপক্ষ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এ সময় কামরুল ইসলামের ছেলে ডা. তানজির ইসলাম অদিতকে আদালতের এজলাস কক্ষে ক্ষিপ্ত মেজাজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা উত্তেজিত হলে সেখান থেকে বের হয়ে যান তিনি। আদালতে শুনানি চলাকালে তার দাঁড়িয়ে এবং প্রভাববিস্তারের মনোভাব প্রদর্শন করা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা।
এদিন সকালে কামরুল ইসলামের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আরিপ। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ উপস্থাপনের পর শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন কামরুল ইসলাম এ মামলায় সম্পৃক্ত নন উল্লেখ করে জামিন আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজিজুল হক দিদার বলেন, ‘সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম ওয়াদুদ হত্যার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। কাজেই তার সর্বোচ্চ রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।’
শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালত ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই বিকেল ৫টায় নিউমার্কেটের ১নং গেটের সামনে গুলিতে নিহত হন ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ। এ ঘটনায় গত ২১ আগস্ট নিউমার্কেট থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত ব্যবসায়ীর আব্দুল ওয়াদুদের শ্যালক আব্দুর রহমান। এর আগে সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর উত্তরা-১২ নম্বর সেক্টর থেকে কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কামরুল ইসলাম ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন এবং শেখ হাসিনা সরকারের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদন্দিবকতায় পুনরায় সংসদ সদস্য হন এবং খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ ও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পরপর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পলায়ন করার পর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিলে অন্য সবার মতো সংসদ সদস্য পদ হারান তিনি। তারপর থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতা।
মন্তব্য করুন