কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১০ এএম
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৫৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ

গুম কমিশনে অভিযোগ করলেন ব্যারিস্টার আরমান

ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাশেম (আরমান)। ছবি : সংগৃহীত
ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাশেম (আরমান)। ছবি : সংগৃহীত

জামায়াতের প্রয়াত নেতা মীর কাশেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাশেম (আরমান) গুম কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি ৮ বছর ‘আয়না ঘরে’ বন্দি ছিলেন।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) তার পক্ষে গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে অভিযোগ দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার গুম কমিশনে অভিযোগটি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে আরমানকে গুম করা ও পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা না পাওয়ার বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমানকে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসের ৪ তারিখ রাত ৯টায় মিরপুর ডিওএইচএসের বাসা থেকে জোর করে স্ত্রী সন্তানের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা তাকে একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে একটি নির্জন কক্ষে/সেলে বন্দি করে রাখে। সেলটি খুবই পুরোনো ছিল, সেখানে তাকে ১৬ দিন রাখা হয়।

এতে বলা হয়, গুম করার কয়েক মাস পরে একজন প্রহরী গভীর রাতে তার সঙ্গে কথা বলতে আসেন এবং জানান, অপহরণের কয়েক মাসের মাথায় তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের একজন বড় কর্মকর্তা হত্যার সিদ্ধান্তের কয়েকদিনের মাথায় সিলেটে একটি সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়ায় তাকে হত্যার সেই পরিকল্পনা পিছিয়ে যায়।

অভিযোগে আরমান বলেন, আমি যেখানে ছিলাম সেখান থেকে খুব কাছেই ইন্টারোগেশন রুম ছিল। আমি ইন্টারোগেশনের হালকা আওয়াজ শুনতে পেতাম। যাদের ওপর নির্যাতন চলছে তাদের আওয়াজে ঘুমাতে পারতাম না। সেখানে দীর্ঘ ৮ বছর আমাকে গুম করে রাখা হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে আমি কোনো প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের ছোঁয়া পাইনি। গোপন বন্দিশালা সম্পর্কে কেউ যেন কোনো তথ্য না পায়, সে বিষয়ে তারা সর্বদা কঠোর নীতি অনুসরণ করত। আমরা কোথায় আছি, তা কখনো বলা হতো না বা আমাদের ভাগ্যে কী ঘটবে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে তারা অস্বীকার করত। তবে গভীর রাতে সামান্য সময়ের জন্য দুই একজন প্রহরী এসে কিছু কথা বলত।

অভিযোগে তিনি আরও বলেন, আমাকে বাইরের কোনো আওয়াজ শুনতে দেওয়া হতো না। মসজিদে যখন আজান দিতো, তখন উচ্চশব্দে গান বাজানো হতো, যেন আমি রাত-দিনের পার্থক্য বুঝতে না পারি। নামাজের জন্য সময় জানতে চাইলেও আমাকে বলা হতো না। তারা বলতেন, এভাবেই নাকি তাদের আদেশ দেওয়া হয়েছে। মাঝে মাঝে গান বন্ধ হলে আমি অন্য বন্দিদের চিৎকার ও কান্নার আওয়াজ শুনতে পেতাম। অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অন্য বন্দিরা চিৎকার করত। তবে সেখানে অন্য কোনো বন্দির সঙ্গে যোগাযোগের কোনো সুযোগ ছিল না। একজন বন্দি হিসেবে খাওয়ার জন্য আমাকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হতো না, প্রয়োজনের অর্ধেক খাবার পরিবেশন করা হতো।

লিখিত অভিযোগে ব্যারিস্টার আরমান বলেন, আমাকে বলা হতো না আমি কোথায় আছি, আমাকে দিন-তারিখ এবং সময় কোনো কিছুই জানতে দেওয়া হতো না। শুধু রমজানে মাস এলে বলা হতো যে, রমজান আসছে। সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা বলতো যে, আজ থেকে তারাবি পড়তে পারেন, চাঁদ দেখা গেছে সেহরির সময় খাবার দেওয়া হবে। সেহরির সময় খাবার দিয়ে বলতো খেয়ে নেন। সময় শেষ হয়ে গেলে আমরা বলব যে, সময় শেষ হয়ে গেছে। এক সময় আওয়াজ দিয়ে বলতো যে আর খাওয়া যাবে না, সময় শেষ। ইফতারের সময় তারা ইফতার দিতো, আর বলতো এখনই খাবেন না, আওয়াজ দিলে খাবেন। হাতকড়া অবস্থায় নামাজ পড়তে হতো। একহাত দিয়ে রুকু করতে হতো, এক হাত দিয়ে সেজদা করতে হতো। একবার ডান হাত একবার বাম হাতে।

প্রথম বন্দিশালা/জায়গা থেকে দ্বিতীয় বন্দিশালা/টর্চার সেলে অনেক বেশি সিস্টেমেটিক পদ্ধতিতে নির্যাতন করা হতো। সেখানে মাঝেমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শনে আসতেন। তারা যখন আসতেন তখন দেয়ালের দিকে মুখ করে বসে থাকতে হতো, নড়াচড়া করতে দেওয়া হতো না। সারাদিন দেয়ালের দিকে মুখ করে বসে থাকতে হতো। আমাকে এক অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে। জীবিত ব্যক্তিদের জন্য এই বন্দিশালা ছিল একটি কবরের মতো। সুপরিকল্পিতভাবে এবং সিস্টেমেটিক পদ্ধতি অবলম্বন করে এমনভাবে বন্দিদের নির্যাতন করা হতো, যাতে বন্দিরা যেন মৃত্যুর চেয়ে আরও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়।

লিখিত অভিযোগে আরমান আরও বলেন, আমি যখন বন্দি ছিলাম তিনটি জিনিস সুনির্দিষ্টভাবে শুনতে পেতাম। এক হচ্ছে বিমান ল্যান্ড করার শব্দ, দ্বিতীয়ত ট্রেনের আওয়াজ, তৃতীয়ত অনেক জোরে গাড়ি চলার শব্দ শুনতে পেতাম। এ ছাড়াও বাঙালি নয়, এমন লোকদের উপস্থিতিও টের পেয়েছি এবং তাদের ভিনদেশি ভাষায় কথা বলতে শুনেছি, যাদের আমার বাংলাদেশি মনে হয়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসিকে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ আমীর খসরুর

রাজবাড়ীতে আ.লীগ নেতার ডিগবাজি, করছেন দখলদারি

ধোবাউড়ায় ছয় নারী ফুটবলারকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে কাল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রবাসীদেরও ভূমিকা ছিল : মঈন খান

সীমান্তে জড়ো হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার সেনারা, নামবে যুদ্ধে

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ডিসি মশিউর ও এডিসি জুয়েল বরখাস্ত

ওয়ালটনের ৩৫০ শতাংশ লভ্যাংশ বিতরণ

আন্দোলনে নিহত রিপনের মরদেহ ১১০ দিন পর কবর থেকে উত্তোলন

ওসির কথায় উজ্জীবিত হয়ে থানায় পিস্তল নিয়ে এলো চার শিশু

পড়তে ভুলে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা?

১০

নভেম্বরের ২৩ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২০ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা

১১

আন্দোলনে আহতদের তালিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির নাম

১২

নির্বাচন কখন, জানালেন নতুন নির্বাচন কমিশনার

১৩

ক্রীড়াঙ্গনের মাধ্যমে অবৈধ মাদককে ‘না’ বলতে পারব : আমিনুল হক

১৪

আইসিসির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি মার্কিন সিনেটরের

১৫

এআই নিয়ে কাজ করবে গ্রামীণফোন ও এরিকসন

১৬

লন্ডন-দিল্লির নতুন প্রেস মিনিস্টার আকবর-ফয়সাল

১৭

জেলের জালে ‘দানব আকৃতির’ কাছিম

১৮

দুই স্বামীর সঙ্গে সংসার করছিলেন জান্নাতুল, অতঃপর...

১৯

ডেঙ্গু / একদিনে বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৭৯

২০
X