গুম হওয়া নেতাকর্মীদের সন্ধান ও অপরাধে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
সোমবার (২১ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ অভিযোগ দায়ের করে সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম হওয়া ওয়ালীউল্লাহ, আল মুকাদ্দাস, হাফেজ জাকির হোসেন, রেজওয়ান হুসাইন ও জয়নাল আবেদীন পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর মধ্যে রেজওয়ান হুসাইনের অভিযোগে বেনাপোলের তৎকালীন ওসি অপূর্ব হাসান, তদন্ত অফিসার শামীম আহমেদ ও এএসআই নূরে আলমের নাম উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০১২ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি ব্যক্তিগত কাজ শেষে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়াগামী হানিফ এন্টারপ্রাইজের ৩৭৫০ নম্বর গাড়িতে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে মধ্যরাতে ওয়ালীউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাসকে ঢাকার নবীনগর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্যদিকে, ২০১৩ সালে ২ এপ্রিল দিবাগত রাত ৪টায় সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শ্যামলী রিং রোডের ১৯/৬ টিক্কাপাড়া বাসা থেকে হাফেজ জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট বেনাপোল থেকে রেজওয়ান হুসাইনকে এবং একই বছরের ২৩ অক্টোবর বান্দরবান থেকে জয়নাল হোসেনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযোগ দায়েরের প্রক্রিয়া শেষে দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সামনে একটি প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিফিংয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ছাত্রশিবিরের ছয়জন নেতাকর্মীকে দীর্ঘদিন ধরে গুম করা হয়েছে, কিন্তু তাদের কোনো সন্ধান নেই। তাদের পরিবার এখনো অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই মানবতাবিরোধী অপরাধের যথাযথ বিচার করবে এবং গুম হওয়া ভাইদের পরিবারের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটাবে।’ এ সময় তিনি গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় ও বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গত ৬ আগস্ট সন্ধান চেয়ে ডিবিতে আবেদন করি, কিন্তু আজও তার কোনো প্রতিকার পাইনি। তাই আজ আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছি। গুম হওয়া প্রতিটি নেতাকর্মীর তথ্য-প্রমাণ আমরা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছি। আমরা চাই, জাতি সঠিক তথ্য জানুক এবং এই অপরাধের বিচার হোক। এসব গুমের ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন, যা দেশ ও জাতির জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হবে।’
পরিবার সদস্যদের পক্ষ থেকে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে স্বজনদের সন্ধান দাবি করা হয় এবং তদন্তপূর্বক অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়।
এ সময় গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান এবং সহকারী আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমানুল্লাহ আদিব উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন