সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী এবং মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে।
গত ১৭ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর খিলগাঁও থানায় এ মামলা করা হয়। মামলায় আসামি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১৮০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আহাদুল ইসলাম নামে একজনকে গুলি ও মারধর করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে এ মামলা হয়েছে। আহাদুলের বাবা মো. বাকের এ মামলাটি করেছেন। মামলায় অন্য আসামিদের সঙ্গে আইনজীবী জেড আই খান পান্না ৯৪ নম্বর আসামি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাজারের পশ্চিমে শুক্কুর আলী গার্মেন্টস মোড়ে ছাত্রজনতার আন্দোলনে অংশ নেন বাদী মো. বাকেরের ছেলে মো. আহাদুল ইসলাম। এ সময় পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন এবং ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ ককটেল ও সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটান এবং আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে নসাৎ করার জন্য হত্যার উদ্দেশ্যে এ গুলি চালানো হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। সেখানে আহাদুল ইসলাম বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। সন্ত্রাসীরা তাকে পরে আরও লাঠিপেটা করেন। আহাদুলকে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিক, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলার বিষয়ে জেড আই খান পান্না বলেন, ঘটনার তিন মাস পর আমার বিরুদ্ধে মামলা হলো। এটা কোনো না কোনো প্রভাবশালীর ইন্ধনেই হয়েছে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। অথচ আমি কোটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে সক্রিয় ছিলাম।
এ বিষয়ে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাউদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বাদীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত হবে। কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হলে তো তিনি অব্যাহতি পেয়ে যাবেন।
জানা যায়, জেড আই খান পান্নার বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কিছু বিষয়ে সমালোচনা করছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘রিসেট বাটনে পুশ’ নিয়ে মন্তব্য এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হত্যার অভিযোগে মামলা ও গণহারে আসামি নিয়ে সমালোচনা সোচ্চার ছিলেন তিনি। জেড আই খান পান্না বলেন, সম্প্রতি সারাদেশে মব ট্রায়াল তথা ক্ষুব্ধ জনতা কর্তৃক মানুষকে হেনস্তা বা সাজাদানের ঘটনার বিস্তার ঘটেছে। মব ট্রায়াল কোনো ট্রায়াল (বিচার) নয়; এটি সমাজের কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই ট্রায়ালের মাধ্যমে এমনকি ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডও ঘটেছে। কিছু মানুষ একত্র হয়ে এসব ঘটাচ্ছে।
মব ট্রায়াল করে বঙ্গবন্ধু, সাত বীরশ্রেষ্ঠসহ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে। মাজার ভাঙা হচ্ছে। এমনকি হাজারো শ্রমজীবী মানুষের কর্মক্ষেত্র গাজী টায়ার্স, প্রাণ-আরএফএলের দুটি প্লান্টসহ অগণিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে; লুটপাট করা হয়েছে। এগুলো এখনও থামেনি। এতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, তেমনি দেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।
মন্তব্য করুন