রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের ব্যবসায়ী জামিল হোসেনকে গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যার মামলায় স্ত্রী মৌসুমি জামিল ও তার দুই সহযোগীকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি হলেন নিহতের ভায়রা জুয়েল রানা ওরফে তানভীর এবং ভাড়াটিয়া খুনি শফিকুল আলম ওরফে কসাই শফিক।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ মোরশেদ আলম আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।
অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে আসামিদের। মামলায় অপর আসামি এমরান হাসান ওরফে ইমরান ওরফে সুলতান হত্যার বিষয়টি জেনেও সংশ্লিষ্ট থানায় না জানানোর কারণে তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে এরই মধ্যে তিনি ১০ মাস কারাভোগ করায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন।
আর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন মৌসুমির বাবা এরফান ও অপর আসামি মো. ইউনূস। মামলাটির বিচার চলাকালে ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার ৪ জন আসামি আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পর সাজার পরোয়ানা দিয়ে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ঢাকার সোয়ারীঘাটে গাম ও স্কচটেপের কারখানা ছিল জামিল হোসেনের। ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের ৫৯ নম্বর বাসার দ্বিতীয় তলায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন তিনি। জুয়েল রানা ওরফে তানভীর সম্পর্কে জামিলের ভায়রা ভাই। তানভীরের সঙ্গে পরকীয়ার কারণে দাম্পত্য কলহের জেরে জামিলের স্ত্রী মৌসুমি ২০১৬ সালের ২ মে জুয়েল ও শফিককে সঙ্গে নিয়ে জামিলকে ধারালো দা-বঁটি দিয়ে গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর জামিলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে বলে নাটক সাজিয়ে চকবাজার থানায় একটি জিডি করেন তিনি। এরপর পুলিশ স্ত্রী মৌসুমিকে জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন কথাবার্তায় সন্দেহ করে । মৌসুমিসহ স্বজনদের নিয়ে রহমতগঞ্জে জামিলের বাসায় গিয়ে দরজা তালাবদ্ধ অবস্থায় পান। পুলিশ তালার চাবি চাইলে তা হারিয়ে ফেলেছেন বলে দাবি করেন মৌসুমি। এরপর তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে খাটের নিচে থেকে জামিলের বস্তায়বন্দি গলিত গলাকাটা লাশ পায়।
এ ঘটনার পরদিন ৩ মে জামিলের বড় বোন শাহিদা পারভীন চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম। দীর্ঘদিন পর আলোচিত এ মামলার রায় হলো। আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ওয়ালিউল ইসলাম তুষার এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে কালবেলাকে বলেন, এই রায়ের রিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
মন্তব্য করুন