নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিভিউ আবেদন করেন তিনি।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানসংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করা হয়েছে। কোন কোন গ্রাউন্ডে রিভিউ আবেদন করা হয়েছে এবং আবেদনে কী বলা হয়েছে, সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার (আজ) দুপুর সোয়া ১টায় সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।
আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানসংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবেদন করেছেন।’ এর আগে গত ২৫ আগস্ট রিভিউ চেয়ে একটি আবেদন করা হয়। আপিল বিভাগের সে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করার জন্য সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ ৫ বিশিষ্ট ব্যক্তি এ আবেদন করেন। অন্য চার ব্যক্তি হলেন- তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
সংবিধানে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়।
এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এ আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। তবে পরবর্তী দুটি সংসদ নির্বাচন অর্থাৎ ১০ম ও ১১তম নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে অভিমত দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল আদালত। কিন্তু লিখিত রায়ে পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে আপিল বিভাগ যে আদেশ দিয়েছিলেন তা আর রাখা হয়নি।
ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। এরপর ওই বছরের ৩ জুলাই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
মন্তব্য করুন