‘ই-সেবা’ দেওয়ার নাম করে ‘পরিচয়’ নামক একটি জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের গেটওয়ে ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ডাটা সেন্টারে সংরক্ষিত ১১ কোটির বেশি বাংলাদেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির মামলায় গ্রেপ্তার ডাটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আসামি অসুস্থ থাকার কারণে রিমান্ড আবেদন করেনি পুলিশ। তবে পরবর্তীতে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে রিমান্ডের প্রয়োজন হতে পারে।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেওয়া হয় তারেক এম বরকতউল্লাহকে। পরে বিকেল ৫টায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোর্শেদ আলম শাহীন। তিনি বলেন, তারেক এম বরকতউল্লাহ একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী। তিনি সরকারি চাকরিতে থাকাকালীন শুধু রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। তথ্য চুরির অভিযোগের দায় তার ওপর বর্তাতে পারে না। এ সময় আসামির শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে জামিন প্রার্থনা করেন তিনি।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী আমানুল করিম লিটন। তিনি ১১ কোটির বেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি ও বিক্রিকে ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধ আখ্যা দিয়ে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর প্রার্থনা করেন।
এ মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। একটি সূত্র কালবেলাকে নিশ্চিত করেছে, বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে থাকা জুনায়েদ আহমেদ পলককে এ বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঘটনায় জড়িত বাকিদের বিষয়েও অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশ।
সম্প্রতি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক অভিনব ‘ই-সেবা’ ফাঁদ পেতে ১১ কোটির বেশি বাংলাদেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে দেশ ও দেশের বাইরের প্রায় ১৮২টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। ভয়াবহ এই জালিয়াতির অনুসন্ধানে নেমে এরই মধ্যে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
২০১৯ সালের ১৭ জুলাই সজীব ওয়াজেদ জয় সিদ্ধিলাভের কৌশল হিসেবে সরকারি ব্যয় বাড়িয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করেন ‘পরিচয়’ নামক জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের এই গেটওয়ে। এর মাধ্যমে প্রতি একজন নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের জন্য অভিযুক্তরা ৫ থেকে ১৫ টাকা হারে আদায় করেছেন ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার দিবাগত রাতে (০৮ অক্টোবর) রাজধানীর কাফরুল থানায় এনামুল হক নামে এক ব্যক্তি দেশের সকল জাতীয় পরিচয়পত্রধারী নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির অভিযোগে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলাটি দায়ের করেন। যেখানে সজীব ওয়াজেদ জয়, জুনায়েদ আহমেদ পলক, ডাটা সেন্টারে সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সজীব ওয়াজেদ জয় ও জুনায়েদ আহমেদ পলক ক্ষমতার অপব্যবহার করে সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে জনগণের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বিক্রি করেছেন। জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে, ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেডকে এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসার অনুমতি দেন অভিযুক্তরা। যে তথ্য দেশ ও দেশের বাইরের প্রায় ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়।
মন্তব্য করুন